উপবন এক্সপ্রেস’ ট্রেন দুর্ঘটনা
ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচল করে ৭৪০/৭৩৯ নং উপবন আন্ত:নগর ট্রেনটি। ঢাকা-সিলেট রুটের অন্যতম ট্রেন উপবন এক্সপ্রেস । সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও স্টেশন থেকে যাত্রী তুলে বরমচাল স্টেশন পার করে। এসময় স্টেশনের নিকটবর্তী ইসলামাবাদ এলাকায় বরছড়া রেলব্রিজে এসে ট্রেনের পেছনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে ।
রবিবার রাত সাড়ে ১১ টা ২৩ জুন ২০১৯
উপবন এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনটি রোববার দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় একটি সেতু পার হওয়ার সময় সেতুটি ভেঙে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছিল ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিলো বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তিতাস নদীর উপরে একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে সড়কপথে যাত্রা ব্যাহত হওয়ার কারণে কয়েকদিন ধরে ট্রেনের ওপরে চাপ বেড়ে যায় ।
প্রথম উদ্ধারকারি এলাকাবাসি
যাত্রীদের চিৎকার শুনে পার্শ্ববর্তী বরমচাল বাজারে অবস্থানরত স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে উদ্ধার কাজে নামেন এলাকাবাসী। মাইকিং শুনে ঘর ছেড়ে ঘুম ভেঙে উদ্ধার কাজে নামেন নারী-পুরুষ উভয়ে ।
উদ্ধার করে আহতদের হাসপাতালের নেওয়ার জন্য এলাকার প্রায় ৩০টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহন কাজ করেছে। অটোরিকশা চালক সেন্টু মিয়া জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বরমচাল স্ট্যান্ডের সব সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের ফোন করে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিয়ে আসি। আমরা সবাই মিলে আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছার আগেই আমরা এলাকাবাসী মিলে প্রায় ৫০ ভাগ মানুষকে উদ্ধার করে ফেলি।
কৃতজ্ঞ ট্রেনের যাত্রীরা
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের ‘চ’ বগির যাত্রী চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এলাকার মানুষের সহায়তায় আমরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। তারা এসে আমাদের উদ্ধার করে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। অক্ষতদের নিজেদের বাড়িঘরে আশ্রয় দিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
৬ জনের মৃত্যু – আহত শতাধিক
রেল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঘটনায় নিহত তিন নারীসহ চারজনের মৃতদেহ কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্থানীয় কর্মকর্তারা ৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। কুলাউড়া সাব স্টেশন থেকে বলা হয়, হাসপাতালে নেয়ার পর একজন মারা যান। নিহতের সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এই দুর্ঘটনায় বহু আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সন্ধায় রেল চলাচল শুরু হতে পাড়ে
সিলেটের সাথে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আজ সকালে ঘটনাস্থল থেকে রেল সচিব সাংবাদিকদের জানান যে, হয়তো রেললাইনে ত্রুটি ছিলো, নয়তো ট্রেনের বগির চাকার এলাইনমেন্ট ঠিক ছিলো না তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী ট্রেন চলে এসেছে। সন্ধ্যার দিকে লাইন ঠিক হলে পুনরায় সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ চালু করা হবে।
উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি
রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ জানতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্বাঞ্চল) মো. মিজানুর রহমানকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সেতু ভেঙে ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত অন্তত পাঁচ -বিবিসি বাংলা