ঢাকা, ২৬ জুন, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনা শনাক্তের ১১১তম দিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১৮ হাজার ৪৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৮৬৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৭৮ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৭ হাজার ৯৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৯৪৬ জন। দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জন।
নমুনা পরীক্ষায় ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ০১ শতাংশ কম। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে আজ দেশে ৪০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৬৬১ জন।
শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার দশমিক ০১ শতাংশ কম।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬৩৮ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১৯১ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৮২৯ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৩ হাজার ১৩৩ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৮ হাজার ২৭৫টি। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৫৮৬টি। গতকালের চেয়ে আজ ৬৮৯টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৬৬টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে সর্বাধিক ১৮ হাজার ৪৯৮টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৭ হাজার ৯৯৯টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৪৯৯টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৪০ জনের মধ্যে ৩১ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়- ১ থেকে ১০ বছরের ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন সিলেট বিভাগের, ৪ জন খুলনা বিভাগের, বরিশাল বিভাগের ৪ জন ও রংপুর বিভাগের ৩ জন রয়েছেন। যে ৪০ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৩১ জন হাসপাতালে এবং ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বাসায়।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল রয়েছে ১৬টি এবং মহানগরীর বাইরে ঢাকা জেলায় একটি। ঢাকা মহানগরে কোভিড রোগীদের জন্য শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৭৭৩ এবং আইসিইউ বেড রয়েছে ১৮০টি। রোগী ভর্তি রয়েছেন ২ হাজার ৩৭৫ জন এবং আইসিইউতে রোগী রয়েছেন ৯৭ জন। সব বিভাগ মিলিয়ে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৬১০টি এবং আইসিইউ রয়েছে ৩৭৯টি। সব বিভাগে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৬৯১ জন, আর আইসিইউতে রয়েছেন ১৮৩ জন। সব হাসপাতালেই রোগী ভর্তি হতে পারবেন কারণ অনেক শয্যা খালি রয়েছে।’
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৮৬১ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৩ হাজার ৮শ’ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪৯০ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ৯ হাজার ৫৬৭ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ২৩ হাজার ৩৪৭ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৯২২ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৭০ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৭৯৯ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৪৮ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৪ হাজার ১২১ জন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৮ হাজার ৪৫০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪টি। বর্তমানে ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৮১টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭০টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ১৬৫টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪০২ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৬ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৩৬৬ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৫ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৫ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ১০৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৯৩ জন এবং এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ১৫৬ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৫ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯২ লাখ ৯৬ হাজার ২০২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ৩৩৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৩৩ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।