ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে সংসদে প্রস্তাব পাস ঃ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যাবস্থা নেওয়ার তাগিদ

আজ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ এর রাতের সংসদ  অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেত্রিত্বে , প্রধান বিচারপতি দ্বারা ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের বিরুদ্ধে  প্রস্থাব সর্ব সম্মতিক্রমে পাশ হয়েছে । প্রধান বিচারপতির করা ঐ  রায়ে সংসদ এবং সংসদীয় ব্যাবস্থাকে নিয়ে আস্বাভাবিক মন্ত্যব্য করা এবং রায়ের পর্যবেক্ষণে  অপ্রাসঙ্গিক মন্ত্যব্য থাকায় সংসদে এই প্রস্থাব আনা হয়েছে ।

চট্টগ্রাম ৮ এর সংসদ সদস্য মইনুদ্দিন খান বাদল সংসদে আজ এই রায়ের বিপক্ষে প্রস্তাব  ঊঠালে সর্বশেষে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনে   হ্যা ও না ভোটের মাধ্যমে এই রায়ের বিরদ্ধে প্রস্তাব পাশ হয় ।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য যুক্তিনির্ভর নয়, আবেগ ও বিদ্বেষতাড়িত। রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যেসব পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন এতে অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা হয়েছে। যেটা এ মামলার যে ‘ফ্যাক্ট ইন ইস্যু’ তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তিনি (প্রধান বিচারপতি) জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। এসব রাজনৈতিক প্রশ্ন আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি বলে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন তাতে আমরা মর্মাহত। আমরা এ রায়ের অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ করার উদ্যোগ নেব

 

বাংলাদেশ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে কি ছিল?

‘৯৬। (১) এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে কোন বিচারক সাতষট্টি বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। (২) প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না। (৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন। (৪) কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।’

ষোড়শ সংশোধনীর আগে বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ নিম্নরূপ ছিল :

‘৯৬। (১) এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে কোন বিচারক সাতষট্টি বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। (২) এই অনুচ্ছেদের নিম্নরূপ বিধানাবলী অনুযায়ী ব্যতীত কোন বিচারককে তাহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইবে না। (৩) একটি সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল থাকিবে যাহা এই অনুচ্ছেদে ‘কাউন্সিল’ বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্র্তী যে দুইজন কর্মে প্রবীণ তাহাদের লইয়া গঠিত হইবে : তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল যদি কোন সময়ে কাউন্সিলের সদস্য এরূপ কোন বিচারকের সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করেন, অথবা কাউন্সিলের কোন সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন অথবা অসুস্থতা কিংবা অন্য কোন কারণে কার্য করিতে অসামর্থ্য হন তাহা হইলে কাউন্সিলের যাহারা সদস্য আছেন তাহাদের পরবর্তী যে বিচারক কর্মে প্রবীণ তিনিই অনুরূপ সদস্য হিসেবে কার্য করিবেন।

(৪) কাউন্সিলের দায়িত্ব হইবেÑ (ক) বিচারকগণের জন্য পালনীয় আচরণ বিধি নির্ধারণ করা; এবং (খ) কোন বিচারকের অথবা কোন বিচারক যেরূপ পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন সেরূপ পদ্ধতি ব্যতীত তাহার পদ হইতে অপসারণযোগ্য নহেন এরূপ অন্য কোন পদে আসীন ব্যক্তির সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করা। (৫) যে ক্ষেত্রে কাউন্সিল অথবা অন্য কোন সূত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্যে রাষ্ট্রপতির এরূপ বুঝিবার কারণ থাকে যে কোন বিচারকÑ (ক) শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে তাহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিতে অযোগ্য হইয়া পড়িতে পারেন, অথবা (খ) গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হইতে পারেন, সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করিতে ও উহার তদন্ত ফল জ্ঞাপন করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। (৬) কাউন্সিল তদন্ত করিবার পর রাষ্ট্রপতির কাছে যদি এরূপ রিপোর্ট করেন, উহার মতে ওই বিচারক তাহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হইয়া পড়িয়াছেন অথবা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হইয়াছেন তাহা হইলে রাষ্ট্রপতির আদেশের দ্বারা ওই বিচারককে তাহার পদ হইতে অপসারিত করিবেন। (৭) এই অনুচ্ছেদে অধীনে তদন্তের উদ্দেশ্যে কাউন্সিল স্বীয় কার্যপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করিবেন এবং পরোয়ানা জারি ও নির্বাহের ব্যাপারে সুপ্রীমকোর্টের ন্যায় উহার একই ক্ষমতা থাকিবে। (৮) কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।