নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিকে ২০১৬ এর প্রক্ষাপেটে কিছু কথা – প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে

প্রিয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রশাসন এবং ছাত্রছাত্রীবৃন্দ,

অতি গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে আলাপ করছি। আমার নাম মাসরুফ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ০৪২ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। আমার পেশাগত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু সুপারিশমালা আপনাদের জ্ঞাতার্থে পেশ করছি যা গ্রহন করা অতীব জরুরী বলে মনে করছি।

পেশায় আমি একজন পুলিশ অফিসার, সম্ভবত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র যে এ পেশায় এসেছে। আমার সার্ভিস লাইফ প্রায় ছয় বছর- এই ছয় বছর চাকুরির শুরুতে প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রমান করতে হয়েছে, এমনকি বিসিএস পরীক্ষার ভাইভার সময়েও নর্থ সাউথ ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে বিভিন্ন উদ্ভট পরিস্থিতির সম্মুক্ষীন হতে হয়েছে।

এই সব প্রতিকুল পরিস্থিতি পার হয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল সার্ভিসে আসা অফিসারগণ যারাই আমরা আছি, প্রত্যেকেই খুব সুনামের সাথে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশসেবা করে যাচ্ছি।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত জ্ঞান আমাকে প্রচন্ডভাবে সহায়তা করেছে। পেশাগত যেসব সাফল্য এ পর্যন্ত অর্জন করেছি, এর পেছনে আমার আলমা ম্যাটারের অবদান প্রতিনিয়ত কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি।

সম্প্রতি অতি বিব্রতকর একটি পরিস্থিতি নিয়ে আপনাদের সাথে আলাপ করতে চাই। বুঝতেই পারছেন- এটি হচ্ছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গী কানেকশন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সারাবিশ্বের সেরা সব জায়গাতে যখন দেশ এবং নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে গৌরব বয়ে আনছে, এমন মুহূর্তে এধরণের ঘটনা অতিমাত্রায় দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত।

আমরা চাইলে বিষয়টিকে অস্বীকার করতে পারি, এবং এটাও বলতে পারি যে যতটা আছে তার চাইতে অনেক বেশি বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। কিন্তু তিক্ত সত্যটা হচ্ছে, অতি ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে হলেও এই জঘন্য এলিমেন্টগুলো আমাদের প্রাণপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এই অল্প কয়েকজন বিপথগামীদের কারণে আমরা বাকি সবাই নানারকম ক্ষতির সম্মুক্ষীন হতে পারি।

দেশের বিপদ ডেকে আনা তো আছেই, এছাড়াও ছাত্রদের সরাসরি ক্ষতি বলতে যেটা হতে পারে তা হচ্ছে বাইরে পড়তে গেলে এই বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে নানারকম হয়রানির শিকার হওয়া। এরা আশি বছরের বৃদ্ধ এবং গর্ভবতী তরুনীকেও হত্যা করতে পারে- নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ করে বসাটাও এদের পক্ষে খুবই সম্ভব।

এক্স এনএসইউয়ার হিসেবে আমি জানি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা নিরানব্বই ভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং দেশপ্রেমিক। হ্যাঁ, এখানে বৈচিত্রময় ব্যাকগ্রাউন্ডের ছেলেমেয়েরা রয়েছে- এটাই কিন্তু আমাদের সৌন্দর্য।

এই সৌন্দর্যে নরকের যেসব কীট বাসা বাঁধতে চাইছে, তাদের প্রতিহত করতে একজন পুলিশ অফিসার এবং এক্স এনএসইউয়ার হিসেবে আপনাদের কাছে কিছু বিনীত অনুরোধ করছিঃ

‪#‎এক‬) জঙ্গীবিরোধী একটা টাস্কফোর্স প্রক্টর স্যার এবং অন্য কিছু বাছাই করা শিক্ষকদের নেতৃত্বে গঠন করা যেতে পারে। এনাদের কাজ হবে ছাত্রদের কাছ থেকে যে কোন ধরণের সন্দেহভাজন তথ্য ইত্যাদি পেলে সেটির রেকর্ড রাখা। কোন ছাত্রছাত্রী যদি জঙ্গিমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকে সংগে সংগে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, তার পরিবারকে জানানো এবং পুলিশকে অবহিত করা। এখানে ছাড় দেবার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।

‪#‎দুই‬) কোন শিক্ষক বা ছাত্র যদি নর্থ সাউথের ভেতরে বা বাইরে যে কোন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয়ের সূত্রে জঙ্গী মতাদর্শ প্রচার করে, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এবং পুলিশকে জানানো।

‪#‎তিন‬) প্রতি ইঞ্চি জায়গা সিসিটিভি মনিটরিং এর আওতায় নিয়ে আসা, প্রবেশ পথে মেটার ডিটেক্টর লাগানো এবং অস্ত্রধারী সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা করা।

‪#‎চার‬) বাধ্যতামূলক জঙ্গীবিরোধী সেমিনার/ওয়ারকশপ আয়োজন করা, প্রয়োজনে সব ছাত্রছাত্রীদের একটা কোর্স করানো যেতে পারে তিন ক্রেডিটের।

‪#‎পাঁচ‬) বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত কেউ জংগী মনোভাবের হয়ে যাচ্ছে এরকম সন্দেহ হলে অথবা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে অতি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে এটি পুলিশকে জানাবে।

#পাঁচ) এ লেখাটি যাঁরা পড়ছেন, আপনারা যদি সরাসরি পুলিশের কাছে যেতে বা পুলিশকে কিছু জানাতে ভয় পান, আমাকে জানান। আমার ইমেইল আইডি mash1874@gmail.com। বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলেই তথ্য পাঠাবেন- যাচাই বাছাই এর দায়িত্ব আমাদের।

প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রাণপ্রিয় স্মৃতিগুলোয় ঘেরা আমাদের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমুলে জঙ্গী উৎখাৎ হোক, আর কোন জঙ্গীর পরিচয় হিসেবে নর্থ সাউথের নাম উচ্চারিত না হোক- এই দায়িত্বটা আমাদের প্রত্যেকের।

সবশেষে হেটারদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলি। যৌক্তিক সমালোচনা অবশ্যই আমন্ত্রিত, কিন্তু নর্থ সাউথের ছাত্রছাত্রী দেখলেই “ঐ দেখা যায় জঙ্গী” বলে যখনই আপনি তাকে ছোট করবেন, এই আচরণে আপনার চারিত্রিক দেউলিয়াপনা প্রকাশ পাবে, আর কিছু না। জেনে রাখুন, গত ছয় বছরে অন্ততঃ আরো তিন জন নর্থ সাউথ গ্র্যাজুয়েট বিসিএস দিয়ে পুলিশে যোগ দিয়েছে, এরা প্রাণ হাতে করে একের পর এক অপারেশনও করে যাচ্ছে।

নর্থ সাউথের একজন পুলিশ অফিসারের সামনে যদি নর্থ সাউথের একটা জঙ্গী পড়ে, ফলাফল কি হবে জানেন?

He will be taken extra care of . Why? Because that terrorist piece of shit gave the good NSUer a bad name.

Not cool at all.

আমরা একটি জাতীয় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি- অন্যকে খাটো করলে আপনার নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবার কোন সম্ভাবনা নেই। এই সময়টাতে অন্ততঃ ইগোর লড়াই বাদ দিই প্লিজ!

বিনীত

মাসরুফ হোসেন
সাবেক ছাত্র
অর্থনীতি বিভাগ
০৪২ ব্যাচ
(বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত)