শুরুতে এডিস মশার কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী রাজধানী কেন্দ্রিক ছিল। বর্তমানে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ধীরে ধীরে তা সারা দেশে বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা ও সিটি কর্পোরেশনে ডেঙ্গু ছড়ায় প্রথমে। এরপর চলতি মাসের মাঝামাঝি খুলনা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ভরা মৌসুমে এ রোগের ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে।
সরকারি হিসাব অনুয়ায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৫৭ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আটজন। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া বেশিরভাগই রাজধানীবাসী। রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে রাজধানীতে অবস্থান করতে ভয় পাচ্ছেন। এমন কি ঢাকায় অবস্থানরত অনেক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় বাড়ি ফিরে যেতে চাইছেন। এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকার হোম ইকোনমিক্স কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী নুসরাত তাসনিম শৈলী এর সাথে, তিনি জানান লেখাপড়ার জন্য থাকেন ঢাকার এক ছাত্রী নিবাসে ও তার পরিবার থাকে নরসিংদীতে। ডেঙ্গু আতঙ্কে তার পরিবার ঢাকায় প্রয়োজনীয় কাজ না থাকলে বাড়ি ফিরে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। আরেক শিক্ষার্থী ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজে অধ্যায়নরত সমিত খান থাকেন রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে, তার পরিবার ও ডেঙ্গু আতঙ্কে কলেজের ক্লাস শেষে রাজধানীতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে নিষেধ করছেন। তবে সরকার থেকে বলা হচ্ছে, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ছেলেধরার মতো ডেঙ্গু নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একই দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। তবে গতকাল শুক্রবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়রকে সতর্ক হয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই সময়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সবার সংযত ও দায়িত্বশীল কথাবার্তা বলা উচিত।
এদিকে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮ টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ৬৮৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এই সংখ্যা গত এক মাসের (২৬ জুন-২৭ জুলাই) মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২৪ জুলাই সবচেয়ে বেশি ৬৬৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল।