দলিল : যে কোন চুক্তির লিখিত ও আইনগ্রাহ্য রূপ হচ্ছে দলিল। সাধারণত বাংলা ভাষায় সম্পত্তি, বিশেষ করে জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয়, বণ্টন এবং হস্তান্তরের জন্য ‘দলিল’ শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
দানপত্র : যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে। স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।
হেবা দলিল : মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য যে দানপত্র দলিলটি ব্যবহৃত হয় সেটি হচ্ছে হেবা দলিল। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২,এর ১২২ধারায় বলা হয়েছে,”কোন সম্পত্তি দাতা কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এর কোন পণ গ্রহণ না করে তাৎক্ষণিকভাবে হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা তার পক্ষে কোন ব্যক্তি সেটি গ্রহণ করলে তাকে দান বা হেবা বলে”।
এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা শর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য। এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।
হেবা/দান দলিল বৈধ হওয়ার শর্তাবলী :
(ক) দাতা কর্তৃক দানের (ইজাব) ঘোষণা প্রদান।
(খ) গ্রহীতা বা তার পক্ষ হতে দান গ্রহন (কবৃল) করা
(গ) দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান। দান গ্রহণের পূবেই গ্রহীতা মারা গেলে দান বাতিল হয়ে যাবে।
হেবা/দানের উপাদানসমূহ :
(১) দাতার জীবনকালের মধ্যে দান কার্য সম্পন্ন হতে হবে।
(২) দান গ্রহণের পূবে দাতার মৃত্য হলে দান বাতিল বলে গণ্য হবে।
(৩) দানের সময় সম্পত্তিতে দাতার মালিকানা ও দখল থাকতে হবে।
(৪) দান স্বেচ্ছায় এবং পণবিহীন হতে হবে।
(৫) দাতাকে সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন ও সাবালক হতে হবে।
(৬) দান গ্রহীতা মানসিক ভারসাম্যহীন বা নাবালক হলে তার পক্ষে অভিভাবক দান গ্রহন করতে পারবেন।
(৭) মুসলিম আইন অনুযায়ী দাতা তার সমুদয় সম্পত্তি যে কাউকে দান করতে পারেন। তবে দায়ভাগ মতে একজন হিন্দু যাদের ভরণপোষণে আইনত বাধ্য তাদের জন্য উপযুক্ত বব্যস্থা রাখার পর বাকী সম্পত্তি দান করতে পারেন।
(৮) দখল হস্তান্তরের পুর্বে দান প্রত্যাহার করা যায়। দখল হস্তান্তরের পরে দান প্রত্যাহারের জন্য আদালতের ডিক্রী লাগবে।
হেবা দলিল কি বাতিলযোগ্য? : কেবলমাত্র দখল হস্তান্তরে পূর্বেই হেবা দলিল বাতিল করা যায়।
নিম্নে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলো বিদ্যমান থাকিলে, হেবা দলিল বাতিল করা যায় না –
(১) হেবাকৃত সম্পত্তির দাতা- গ্রহীতা স্বামী বা স্ত্রী হইলে,
(২) গ্রহীতা মৃত্যূবরণ করিলে,
(৩) দাতা-গ্রহীতার মধ্যে বিবাহ অযোগ্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকিলে,
(৪) হেবাকৃত সম্পত্তি গ্রতীতা কর্তৃক বিক্রি বা হস্তান্তরিত হয়ে গেলে,
(৫) হেবাকৃত সম্পত্তি বিলীন বা ধ্বংস হয়ে গেলে,
(৬) হেবাকৃত সম্পত্তির মূল্য বেড়ে গেলে,
(৭) হেবাকৃত সম্পত্তির প্রকৃতি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেলে,
(৮) হেবা’টি ‘হেবা বিল এওয়াজ’ (বিনিময়ে দান) হয়ে থাকিলে হেবা দলিল বাতিল করা যায় না।
তবে উপরের উল্লেখিত ক্ষেত্র গুলো বিদ্যমান না থাকিলে আদালতের মাধ্যমেও হেবা দলিল বাতিল করা যায়।
হেবা দলিলের মাধ্যমে প্রাপ্ত জমি কি বিক্রয়যোগ্য ? :
হেবা কৃত জমি গ্রহীতা বিক্রি সহ যে কোন ভাবেই হস্তান্তর করতে পারবে।