আর্থিক বাজারের ধারণা : শেয়ার বাজারের ধারণা

আর্থিক বাজারের ধারণা


আর্থিক বাজার এমন একটি বাজার যেখানে আর্থিক সম্পদসমূহ ক্রয়-বিক্রয় হয়। আর্থিক সম্পদসমূহ হলো:
শেয়ার, বন্ড ও বাণিজ্যিক পত্র ইত্যাদি। আর্থিক বাজারে দু’ধরনের একক থাকে যেমন: উদ্ধৃত্ত একক/সঞ্চয়কারী ও ঘাটতি
একক। উদ্ধৃত্ত একক বলতে তাদেরকে বুঝায় যাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় কম অর্থাৎ যারা আর্থিক বাজারে অর্থ সরবরাহকারী
অন্যদিকে ঘাটতি একক হলো তারা যাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি অর্থাৎ যাদের অর্থের চাহিদা রয়েছে। যেমন: ব্যক্তি,
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও সরকার ইত্যাদি। আর্থিক বাজারে একটি পক্ষ তহবিল সরবরাহ করে এবং অন্য একটি পক্ষের
তহবিলের প্রয়োজন হয়। তহবিলের চাহিদাকারীগণকে ঘাটতি একক বলে এবং তহবিলের যোগানদাতাগণকে উদ্ধৃত্ত একক
বা সঞ্চয়কারী বলে।
আর্থিক বাজারকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়:
১. অর্থ বাজার (গড়হবু গধৎশবঃ)
২. পুঁজি বাজার (ঈধঢ়রঃধষ গধৎশবঃ)
১. অর্থ বাজার (গড়হবু গধৎশবঃং)

আর্থিক খাতের মধ্যে, “আর্থিক বাজার” শব্দটি প্রায়শই অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত বাজারগুলিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘমেয়াদী অর্থের জন্য মূলধনের বাজারগুলি স্বল্পমেয়াদী অর্থের জন্য অর্থের বাজারগুলি শব্দ ব্যবহার করা হয়।


অর্থ হলো এমন একটি বাজার যেখানে স্বল্পমেয়াদী (১ বছর বা তার চেয়ে কম সময়) আর্থিক সম্পদসমূহ ক্রয় বিক্রয় করা
হয়। সুতরাং যে বাজারে স্বল্পমেয়াদি অর্থাৎ এক বছরের কম মেয়াদ সম্পন্ন আর্থিক সম্পদসমূহ লেনদেন হয় তাকে অর্থ
বাজার বলে। উদাহরণস্বরুপ সরকারের স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের প্রয়োজন মেটাতে সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক
ইস্যুকৃত ট্রেজারি বিলের ক্রেতা হলো বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ। এভাবে অর্থ বাজার স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের
প্রয়োজন মেটাতে পারে। অর্থ বাজারের উপাদানসমূহ হলো: ট্রেজারি বিল, বাণিজ্যিক কাগজ, ব্যাংকের স্বীকৃতিপত্র,
পুণঃক্রয় চুক্তি, হস্তান্তরযোগ্য আমানত সার্টিফিকেট ইত্যাদি।


অর্থ বাজার নির্দিষ্ট কোন স্থানে কেন্দ্রীভুত থাকে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে অর্থ বাজার পরিচালিত হয় যেমন: কেন্দ্রীয়
ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। সাধারনত কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং
এটি সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। অর্থ বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাণিজ্যিক ব্যাংক। কারণ এটি ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি শ্রেণিকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ করে থাকে। যেমন: ব্যাংক বাণিজ্যিক
কাগজ বাট্টাকরণের মাধ্যমে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আর্থিক
বাজারের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হল কেন্দ্রিয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থ বাজার সিকিউরিটিজ/্উপাদানসমূহ:
অর্থ বাজারের উপাদানসমূহ হলো: ট্রেজারি বিল, বাণিজ্যিক কাগজ, ব্যাংকের স্বীকৃতিপত্র, পুণঃক্রয় চুক্তি, হস্তান্তরযোগ্য
আমানত সার্টিফিকেট ইত্যাদি। নি¤েœ এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. ট্রেজারি বিল: ট্রেজারি বিল সরকারের ট্রেজারি বিভাগ ইস্যু করে থাকে। ভবিষ্যতের কোন একটি নির্দিষ্ট তারিখে বিলের
অর্থ পরিশোধ করার অঙ্গীকার করে সরকার যে স্বল্পমেয়াদি অঙ্গীকারপত্র ইস্যু করে তাকে ট্রেজারি বিল বলা হয়।
 সাধারনত ট্রেজারি বিল নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে (বাট্টায়) বিক্রয় করা হয়। কারণ এটির উপরে কোন
কুপন সুদ প্রদান করা হয় না।
 এটির নির্ধারিত মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের পার্থক্য হলো ট্রেজারি বিল ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সুদ।
 বিভিন্ন ধরনের ট্রেজারি বিল ইস্যু করা হয়, যেমন: ৩০ দিন, ৯০ দিন এবং ১ বছর মেয়াদি ইত্যাদি। এ ট্রেজারি
বিলগুলো পরবর্তীকালে নতুন প্রবর্তিত ২৮ দিন, ৯১ দিন, ১৮২ দিন, ৩৬৪ দিন, ২ বছর এবং ৫ বছর মেয়াদি
সরকারি ট্রেজারি বিল।
 বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি ট্রেজারি বিলের প্রধান সংরক্ষণকারী হিসেবে কাজ করে। বিলগুলো ব্যাংক বা আর্থিক
প্রতিষ্ঠানের নিকট তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিলামে বিক্রয় হয়।
২. বাণিজ্যিক কাগজ: স্বল্পমেয়াদি জামানতবিহনি অঙ্গীকার পত্রকে বাণিজ্যিক কাগজ বলে। বড় বড় নামকরা প্রতিষ্ঠান
এগুলো


মুদ্রা বাজারে বিক্রয় করে স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নে প্রয়োজন মিটায়। এর মেয়াদ সাধারনত ৩ মাস থেকে ১ বছর হয়ে থাকে।
এটি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য বিক্রয় করা হয়। এই নির্ধারিত মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যর পার্থক্য হলো বাণিজ্যিক
কাগজ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সুদ বা মুনাফা। এটি সরাসরি অথবা ডিলারের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়। এর ক্রেতা হলো বিভিন্ন
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ।
৩. ব্যাংকের স্বীকৃতিপত্র: বাণিজ্যিক ব্যাংক যখন কোন মেয়াদি ড্রাফট প্রস্তুত করে এর বাহককে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে
একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করে তখন তাকে ব্যাংকের স্বীকৃতিপত্র বলে। অভ্যন্তরীণ অথবা
আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যেও ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী অর্থসংস্থানের উদ্দেশ্যে ব্যাংকের স্বীকৃতিপত্র প্রস্তুত হয়। এটি যখন কোন ব্যাংক
কর্তক অনুমোদিত হয় তখন একে ব্যাংকের স্বীকৃতিপত্র হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর মেয়াদ ৩০ থেকে ১৮০ দিন হয়ে
থাকে। যে সকল কোম্পানির ঋণ পরিশোধের সুনাম ও ক্ষমতা রয়েছে ব্যাংক তাদেরকেই এ ধরনের অর্থায়নের সুবিধা
প্রদান করে থাকে। এটি দু’টি কোম্পানির মধ্যে বিক্রয়যোগ্য দলিল হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং পণ্য বিক্রেতা এর মেয়াদান্তে
অথবা মেয়াদ পুর্তির পূর্বে কম দামে বিক্রি করে নগদ অর্থের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে।
৪. পুণঃক্রয় চুক্তি: পুণঃক্রয় চুক্তি হলো একটা স্বল্প মেয়াদি সিকিউরিটি যা একটি নির্দিষ্ট সময় পরে শর্তসাপেক্ষে মূল
বিক্রেতা পূর্বনির্ধারিত মূল্যে সিকিউরিটি পুণ:রায় ক্রয় করে নিবে। এর নির্ধারিত মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের পার্থক্য হলো এটি
ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সুদ বা মুনাফা। এ সুদের হারকে রিপোরেট বলা হয়। যদি পুণ:ক্রয় চুক্তি একদিন অথবা খুব কম
সময়ের জন্য হয় তখন তাকে ওভার রিপো বলা হয়। আবার যদি এ চুক্তি দীর্ঘ সময়ের জন্য হয় তখণ তাকে টার্ম রিপো
বলা হয়।
৫. হস্তান্তরযোগ্য আমানত সার্টিফিকেট: বাণিজ্য্যিক ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট সুদের হারে আমানতের বিপরীতে যে স্বল্পমেয়াদি
সার্টিফিকেট বাজারে ছাড়ে তাকে হস্তান্তরযোগ্য আমানত সার্টিফিকেট বলে। মেয়দি পূর্তির পূর্বে নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে
এটি মুদ্রা বাজারে বিক্রি করা যায় তাই এটিকে হস্তান্তরওযাগ্য দলিল বলে। আমানত গ্রহীতা এই রসিদের মাধ্যমে তার
বাহককে আমানতকৃত অর্থ মেয়াদান্তে সুদ পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়। এটিতে অর্থ পরিশোধের তারিখ ও পদ্ধতি সম্পর্কে
উল্লেখ করা থাকে। এটি ট্রেজারি বিল হতে অধিক আয়ের নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং এটি ট্রেজারি বিল ও বাণিজ্যিক কাগজ
চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ শর্তে ও অধিক নমনীয় মেয়াদে মুদ্রাবাজারে বিক্রয় করা যায়।
পুঁজি বা মূলধন বাজার (ঈধঢ়রঃধষ গধৎশবঃং)
পুঁজি বা মুলধন বাজার বলতে ঐ বাজারকে বুঝায় যেখানে দীর্ঘমেয়াদী (১ বছরের অধিক সময়) আর্থিক সম্পদ ক্রয় বিক্রয়
করা হয়। সুতরাং যে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ এক বছরের অধিক মেয়াদ সম্পন্ন আর্থিক সম্পদ লেনদেন হয় তাকে পুঁজি
বা মুলধন বাজর বলা হয়। একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুঁজি বাজার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা
পালন করে থাকে। মূলধন বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সিকিউরিটি সমূহ লেনদেন হয়, যেমন: বন্ড, স্টক ও মর্টগেজ ইত্যাদি।

পুঁজি বাজারের হাতিয়ার/ উপাদানসমূহ


যে সকল আর্থিক সম্পদ পুঁজি বাজারে ক্রয়- বিক্রয় হয় সে গুলোকে পুঁজি বাজারের হাতিয়ার বা উপাদান বলে। যেমন:
শেয়ার, অগ্রাধিকার শেয়ার এবং বন্ড ইত্যাদি। নি¤েœ পুঁজি বাজারের এসব উপাদান বা হাতিয়ার সম্পর্কে আলোচনা করা
হলো:
১. সাধারণ শেয়ার: পুঁজি বাজারের প্রধান উপাদান হলো সাধারণ শেয়ার। শেয়ার হলো একটি দলিল যা কোম্পানির
আংশিক মালিকানা উপস্থাপন করে। সাধারনত যৌথমূলধনী কোম্পানি শেয়ার বিক্রয়ের সাহায্যে মূলধন সংগ্রহ
করে। শেয়ার ক্রয়ের সাহায্যে প্রতিটি শেয়ারহোল্ডার কোম্পানির আংশিক মালিকানা লাভ করে। শেয়ারমালিকগণ
পরিচালক নির্বাচনে ভোট দিতে পারে ও শেয়ারহোল্ডারদের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ করতে পাওে এবং যে কোন
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মতামত দিতে পারে। এধরনের শেয়ারহোল্ডারগণ মুনাফার একটি অংশ লভ্যাংশ হিসেবে
পেয়ে থাকে।
২. অগ্রাধিকার শেয়ার: এটি বিক্রয় করে কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহ করা হয়। যে সকল শেয়ার মালিকগণ
লভ্যাংশ প্রাপ্তি ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারন শেয়ারমালিকগনের চেয়ে অগ্রাধিকার পেয়ে
থাকে তাকে অগ্রাধিকার শেয়ার বলা হয়। এধরনের শেয়ারমালিকগণ এর কোন ভোটাধিকার থাকে না এবং কোন
বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মতামত দিতে পারে না। এটির কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে না এবং এর লভ্যাংশের
হার পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট থাকে।
৩. বন্ড বা ঋণপত্র: বন্ড হলো একটি দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের দলিল যা ইস্যুকারি প্রতিষ্ঠানকে এর ধারককে একটি
নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকে। এটিতে ফেস ভেলু, সুদের হার, ঋণের পরিমাণ এবং
মেয়াদ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করা থাকে। এটি ইস্যু করার সাহায্যে একটি কোম্পানি দীর্ঘ মেয়াদি মূলধন
সংগ্রহ করে থাকে। এর হোল্ডারগণ নির্দিষ্ট হারে সুদ পেয়ে থাকেন।

শেয়ার বাজারের ধারণা, প্রকারভেদ, স্টক এক্সচেঞ্জ ও এর
প্রকারভেদ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বাজারের মধ্যে পার্থভক্য

শেয়ার বাজার (ঝযধৎব গধৎশবঃ)
যে বাজারে কোম্পানির শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় হয় তাকে শেয়ার বাজার বলে। এটি
কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীদের
শেয়ার লেনদেনের সুষ্ঠুভাবে জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। এধরনের প্রতিষ্ঠানকে স্টক একচেঞ্জ বলে।
বাংলাদেশের দু’টি শেয়ার বাজার রয়েছে, যেমন: (১) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও (২) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।

শেয়ার বাজারকে
প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়:

১. প্রাথমিক বাজার ও ২. মাধ্যমিক বাজার ।


নি¤েœ এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো:


১. প্রাথমিক বাজার: যে বাজারে কোন কোম্পানির শেয়ার প্রথম বার ইস্যু করা হয় তাকে প্রাথমিক বাজার বলে। এক্ষেত্রে
শেয়ার বা সিকিউরিটি বিক্রয়ের অর্থ ইস্যুকারী কোম্পানি সরাসরি পেয়ে থাকে। একজন বিনিয়োগকারী কোনো কোম্পানির
শেয়ার বিক্রির প্রথম প্রস্তাবে অংশ গ্রহণ করে লটারির মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় করার সুযোগ পায়। এ বাজারে একবারই শেয়ার
বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ এখানে বার বার লেনদেন করা হয় না। সুতরাং কোন কোম্পানি যে বাজারে শেয়ার বিক্রির প্রথম
প্রস্তাব (ওহরঃরধষ ঢ়ঁনষরপ ড়ভভবৎ) করে, সে বাজারকে প্রাথমিক বাজার বলে।


২. মাধ্যমিক বাজার: যে বাজারে প্রাথমিক বাজারে ইস্যুকৃত সিকিউরিটিজসমূহ বারংবার ক্রয়-বিক্রয় বা লেনদেন করা হয়
তাকে মাধ্যমিক বাজার বলে। এটির সাহায্যে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। বাংলাদেশে দু’টি মাধ্যমিক
শেয়ার বাজার রয়েছে, যেমন: ১) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ও ২) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ইত্যাদি। এ
বাজারের উদ্দেশ্য হলো সিকিউরিটিজ সমূহের তারল্য বজায় রাখা ও সিকিউরিটিজ সমপর্কে তথ্য সরবরাহ করা। যেমন:
শেয়ারের বাজার মূল্য, শেয়ার প্রতি আয়, শেয়ার প্রতি লভ্যাংশ ও প্রাইজ আরনিংস রেশিও ইত্যাদি।
শেয়ার ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান এবং শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত শেয়ার বাজার প্রয়োজন।
এধরনের প্রতিষ্ঠানকে স্টক এক্সচেঞ্জ বলে। কোম্পানিগুলো স্টক এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে শেয়ার ইস্যু করার মাধ্যমে তহবিল
সংগ্রহ করে এবং বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। বাংলাদেশে দু’টি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে;
যেমন:


১) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড
২) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড


এ দু’টি স্টক এক্সচেঞ্জে বিভিন্ন কোম্পানির সাধারণ শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবেঞ্চার এবং বন্ড ইত্যাদি ক্রয় বিক্রয় হয়।
বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারগুলোকে এ,বি, জি, এন এবং জেড

ইত্যাদি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এ দু’টি স্টক এক্সচেঞ্জকে গতিশীল করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ
সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
নি¤েœ এ দু’টি স্টক এক্সচেঞ্জ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ: বাংলাদেশর সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ মাধ্যমিক শেয়ারবাজার হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ । ১৯১৩
সালের কোম্পানির আইনের আওতায় এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৫৪ সালে নিবন্ধিত হয়ে ঊধংঃ
চধশরংঃধহ ঝঃড়পশ ঊীপযধহমব অংংড়পরধঃরড়হ খঃফ. নামে ১৯৫৬ সালে যাত্রা শুরু করে। ১৯৬২ সালে এ প্রতিষ্ঠানের নাম
পরিবর্তন করে রাখা হয় “ঊধংঃ চধশরংঃধহ ঝঃড়পশ ঊীযধহমব খঃফ.” এবং ১৯৬৪ সালে তা পুনরায় পরিবর্তিন করে
বর্তমান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নাম করন করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে ১৯৭১ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ছিল ১৯৬টি যার পরিশোধিত মুলধনের পরিমাণ ছিল ৪০০ (চারশত) কোটি টাকা।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চ এর কোম্পানির সংখ্যা হলো ৫৬৪ টি । এটি ১৮ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়।
শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমেই শুধুমাত্র এ প্রতিষ্ঠানের সদস্য হওয়া যায় এবং লেনদেনে অংশগ্রহণ করা যায়। সাধারণত
শেয়ারবাজারের গতি বা সার্বিক অবস্থা বুঝার জন্য সূচক ব্যবহার করা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তিনটি সূচক ব্যবহার
হয়। যেমন:
ক. ডিএসই ব্রড সূচক
খ. ডিএসইএস সূচক এবং
গ. ডিএসই ৩০ সূচক
২. চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ: দেশের দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ হলো সিএসই। ১৬৯৫ সালের ১০ই অক্টোবর হতে এ প্রতিষ্ঠানটি
ঢাকা এক্সচেঞ্জের ন্যায় কোম্পানি আইনের আওতায় অলাভজনক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে (নিবন্ধক তারিখ:
১.৪.১৯৯৫) ট্রেডিং শুরু করে। শুরুতে এর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সংখ্যা ছিল ৩০টি এবং পরিশোধিত শেয়ার মুলধন
ও ডিবেঞ্চারসহ এর মোট মুলধনের পরিমাণ ছিল ২১৫.৪ কোটি টাকা। এটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো ১৮ সদস্য বিশিষ্ট
বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। এর উদ্দেশ্য, নীতি ও কার্যাবলি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অনুরূপ। ২০১৫ সালের ২৬ শে
ফেব্রæয়ারি তারিখে এর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ এর সংখ্যা ছিল ২৮৯ এবং বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল ২৫৭১৪৬.৪০
কোটি টাকা। বর্তমানে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এর কোম্পানির সংখ্যা হলো ২৯৬ টি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো এটিতেও
তিনটি সূচক ব্যবহার হয়। যেমন:
ক. সিএসই সকল শেয়ারমূল্য সূচক
খ. সিএসইএক্স সূচক
গ. সিএসই ৩০ সূচক
প্রাথমিক বাজার ও সেকেন্ডারি বাজারের মধ্যে পার্থক্য:
শেয়ার বাজারে দু’ভাবে বিনিয়োগ করা যায়; যেমন: প্রাথমিক বাজার ও সেকেন্ডারি বাজার। নি¤েœ প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি
বাজারের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলে

প্রাথমিক বাজার মাধ্যমিক বাজার
যে বাজারে কোন কোম্পানির শেয়ার প্রথম বার ইস্যু করা হয়
তাকে প্রাথমিক বাজার বলে।
যে বাজারে প্রাথমিক বাজারে ইস্যুকৃত সিকিউরিটিজ
সমূহ বারংবার ক্রয়-বিক্রয় বা লেনদেন করা হয় তাকে
মাধ্যমিক বাজার বলে।
এ বাজারের মাধ্যমে নতুন শেয়ার ইস্যু করার মূল উদ্দেশ্য
হলো অধিক মুলধন সংগ্রহ করা।
এ বাজারের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তারল্য বজায় রাখা
এবং সিকিউরিটিজ সম্পর্কে যেমন: বর্তমান বাজার মুল্য,
ইপিএস ও লভ্যাংশ ইত্যাদি তথ্য প্রদান করা।
এ বাজারে শেয়ার ইস্যু করার পূর্বে এর মূল্য করা হয়। এ বাজারে শেয়ারের মূল্য প্রতি মুহূর্তে উঠানামা করে।
এ বাজারে বিনিয়োগের তুলনামুলকভাবে ঝুঁকি কম। এ বাজারে শেয়ার মূল্য সর্বদা উঠানামা করার কারণে

Leave a Comment

Scroll to Top