অর্থনীতির উৎপত্তি ও বিকাশ

অর্থনীতি বা অর্থশাস্ত্র সামাজিক বিজ্ঞান এর একটি শাখা যা পণ্য এবং সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

সম্পদ সীমিত কিন্তু চাহিদা অফুরন্ত– এই মৌলিক পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা অর্থনীতির প্রধান উদ্দেশ্য৷ অর্থনীতি শব্দটি ইংরেজি ‘Economics’ শব্দের প্রতিশব্দ। Economics শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Oikonomia’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ গৃহস্থালী পরিচালনা। এল.রবিন্স এর প্রদত্ত সংজ্ঞাটি বেশিরভাগ আধুনিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি বলেন, “অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাব ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদের সম্পর্ক বিষয়ক মানব আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।” এল.রবিন্সের সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এটি মানব জীবনের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্টের উপর প্রতিষ্ঠিত, যথা অসীম অভাব, সীমিত সম্পদ ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সম্পদ। অর্থনীতির পরিধিসমূহ বিভিন্ন ভাগে বা শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যেমনঃ

ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতি
নেতিবাচক অর্থনীতি ও ইতিবাচক অর্থনীতি
মেইনস্ট্রীম ও হেটারোডক্স অর্থনীতি
আধুনিক অর্থনীতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, (১)ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও (২)সামষ্টিক অর্থনীতি৷ ব্যষ্টিক অর্থনীতি মূলত ব্যক্তি মানুষ অথবা ব্যবসায়ের চাহিদা ও যোগান নিয়ে আলোচনা করে থাকে৷ অন্যদিকে সামষ্টিক অর্থনীতি একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জাতীয় আয়, কর্মসংস্থান, মুদ্রানীতি, ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে৷ অন্য ভাবে বলা যায় যে, Micro Economics বা ব্যষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য হলো অর্থনীতির একটি বিশেষ অংশ বা একককে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা এবং Macro Economics বা সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির সামগ্রিক বিষয়াদি বিশ্লেষণ করে থাকে।

অর্থশস্ত্রের তিনটা মূল কথা হলো এইঃ প্রথমেই মানুষের আছে কেনা-বেচার স্বাধীনতা, যেটা থাকায় সে যা নিজে বানাতে বেশি খরচ হয় তা অন্যের কাছ থেকে কম খরচে কিনে আনতে পারে, আর নিজে যেটা কম খরচে বানাতে পারে সেটা অ্ন্যের কাছে লাভে বেচতে পারে। দ্বিতীয় সূত্রটা হল মানুষ যত মূল্যের জিনিস কিনবে তত মূল্যের পরিশোধ দিবে, যাকে বলা যায় মূল্যসমতার সুত্র বা বিধি। আপনি ১০০ টাকা দামের টি-শার্ট কিনলে ১০০ টাকাই দেবেন, কম নয়, বেশি নয়। আর তিন নম্বর সূত্রটা হলো পারস্পরিকতাঃ আপনি যদি করিমের কাছ থেকে কলা কিনেন, তাহলে কলার দাম করিমকেই দেবেন, অন্য কাউকে নয়, আর আপনি যদি ক্রেতা হন, দামটা আপনিই দিবেন, অন্য কেউ দিবেনা। যে মাল কিনেছে সেই মালের দাম দেবে, আর যে বিক্রি করেছে সেই দাম পাবে।

অর্থনীতি সমাজ বিষয়ক বিজ্ঞানের সেই অংশ, যা সমাজবদ্ধ মানুষের আর্থিক দিক নিয়ে
আলোচনা করে। অর্থ্যাৎ অর্থনীতি হল এমন একটি পরিবর্তনশীল সামাজিক বিজ্ঞান যা মানুষের আয় ও এর বন্টন,
কর্মসংস্থান, মানবিক কল্যাণ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কল্পে অসীম অভাব ও বিকল্প ব্যবহার উপযোগী। সীমিত
সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের পথ নির্দেশ করে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অর্থনীতির অনেক সংজ্ঞা দিয়েছেন। নি¤েœ
তাদের দেয়া অর্থনীতির কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলঃ
১। অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথ তাঁর ‘ডবধষঃয ড়ভ ঘধঃরড়হং’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘‘অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা
জাতি সমূহের সম্পদের প্রকৃতি ও কারন সম্বন্ধে অনুসন্ধান করে।’’
২। অধ্যাপক মার্শাল বলেছেন, ‘‘ অর্থনীতি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কার্যাবলী আলোচনা করে।’’
৩। অধ্যাপক এল.রবিনস এর মতে, ‘‘ অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের অভাব ও বিকল্প ব্যবহার যোগ্য
অপ্রতুল উপকরণের মধ্যে সম্পর্ক পর্যালোচনা কর।’’
পরিশেষে বলা যায়, অর্থনীতি হল এমন একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা কিভাবে মানুষ অপ্রাচুর্যের সাথে তাদের
অভাবের সামাঞ্জস্য বিধানের প্রচেষ্টা চালায় এবং কিভাবে মোট বিনিময়ের মাধ্যমে বাস্তায়িত হয় তা আলোচনা করে।

অর্থনীতির জনক কে?

অর্থনীতির জনক হল অ্যাডাম স্মিথ। তিনি ১৭৭৬ সালে An Inqiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations নামক গ্রন্থ লিখে অর্থনীতির মূল বিষয়গুলি সম্পর্কে ধারণা দেন৷


:
আইন, ধর্ম, নৈতিকতা, দর্শন এবং অর্থনীতি তখন একসঙ্গে আলােচিত হতাে। অর্থনীতি বিষয়ের আলাদা কোনাে অস্তিত্ব ছিল না। উৎপাদন, ভােগ ও দৈনন্দিন সংসার পরিচালনার বিদ্যাকেই তখন অর্থনীতি বলা হতাে।

বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অর্থনীতির সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে দিয়েছেন । এই সংজ্ঞাগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় বলে পণ্ডিতগণ মত দিয়েছেন।

অর্থনীতির সংজ্ঞার এই তিনটি ভাগ হলো-

১. সম্পদের বিজ্ঞান (Science of Wealth)
২. কল্যাণের বিজ্ঞান (Science of Welfare)
৩. অপ্রাচুর্যের বিজ্ঞান (Science of Scarcity)

অ্যাডাম স্মিথের সংজ্ঞা

ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথকে আধুনিক অর্থশাস্ত্রের জনক বলা হয়। তিনি ১৭৭৬ সালে ‘An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations’ নামক গ্রন্থ লিখে অর্থনীতির মূল বিষয়গুলি সম্পর্কে ধারণা দেন৷ অ্যাডাম স্মিথ বলেন, ‘অর্থনীতি হচ্ছে এমন এক বিজ্ঞান যা জাতিসমূহের  সম্পদের প্রকৃতি এবং তার কারণ অনুসন্ধান করে’।

সম্পদ কীভাবে উৎপাদিত হয় এবং তা কীভাবে মানুষের উপকারে লাগে তাই ছিল তার আলোচ্য বিষয়। অ্যাডাম স্মিথ সম্পদের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

মার্শালের সংজ্ঞা

আলফ্রেড মার্শাল (Alfred Marshall) ছিলেন একজন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ। অর্থনীতি নিয়ে মার্শালের সংজ্ঞার মূল আলোচ্য বিষয় হলো অভাব মোচনসংক্রান্ত মানুষের দৈনন্দিন কার্যাবলি।

১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘Economics of Industry’ গ্রন্থে মার্শাল বলেছেন, ‘অর্থনীতি মানুষের জীবনের দৈনন্দিন সাধারণ কার্যাবলি আলোচনা করে’।

এখানে ‘মানুষের সাধারণ কার্যাবলি’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, মানুষ কীভাবে অর্থ উপার্জন করে ও কীভাবে সেই উপার্জিত অর্থ তার বিভিন্ন অভাব মেটানোর জন্য ব্যয় করে।

ক্যানন, অ্যারো, পিগু এবং অন্য অর্থনীতিবিদরা মার্শালের এ বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করেন।

লিয়োনেল রবিন্সের সংজ্ঞা 

বিশ্বের অন্যতম সেরা সামাজিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় London School of Economics and Political Science (LSE) এর এক সময়ের প্রফেসর লিয়োনেল চার্লস রবিন্স (Lionel Charles Robbins, Baron Robbins) তাঁর ‘Nature and Significance of Economic Science’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, “অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সসীম সম্পদের সম্পর্ক বিষয়ক মানব আচরণ সম্বন্ধে আলোচনা করে।”


অর্থনীতির ইংরেজি শব্দ Economy গ্রিক শব্দ Oikonomia থেকে এসেছে ! Oikonomia অর্থ গৃহস্থালির ব্যবস্থাপনা (Management of the Household)। প্লেটো (৪২৭ – ৩৪৭ খ্রিষ্টপূর্ব) এবং এরিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রিষ্টপূর্ব) ছিলেন গ্রিক সভ্যতার বিখ্যাত দুই চিন্তাবিদ। এ দুজন চিন্তাবিদ ব্যক্তিগত সম্পত্তি, শ্রমিকের মজুরি, দাসপ্রথা ও সুদসহ অর্থনীতির অনেক মৌলিক বিষয় নিয়ে আলােচনা করেছেন।


প্রাচীন ভারতে চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বৃহত্তর পরিসরে সারা দেশের রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি ও সামরিক বিষয়ের উপর আলােকপাত করা হয়। ষােড়শ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত (১৫৯০-১৭৮০) ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইতালিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের যে প্রসার ঘটে, তাকে বাণিজ্যবাদ’ (Mercantilism) বলা হয়। দেশের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি, রাষ্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্য উদ্ধৃত্তকরণের লক্ষ্যে ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা বেশি রপ্তানি করত এবং খুব সামান্যই আমদানি করত। ইংল্যান্ডের উৎপাদিত পণ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করে মূল্যবান ধাতু (সােনা, রুপা, হীরা ইত্যাদি) আমদানি করা হতাে। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ফরাসিরা সে দেশের ধনী মানুষের বিলাসী জীবনযাপন, অতিরিক্ত করারােপ এবং ইংল্যান্ডের বাণিজ্যবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভূমিবাদ (Physiocracy) মতবাদ প্রচার করেন। ভূমিবাদীদের মতে, কৃষিই (খনি ও মসক্ষেত্রসহ) হলাে উৎপাদনশীল খাত। অন্যদিকে শিল্প ও বাণিজ্য উভয়ই অনুৎপাদনশীল খাত হিসেবে মনে করা হতাে।
এভাবেই প্রাচীন এবং মধ্যযুগে অর্থনীতিবিষয়ক আলােচনা ক্রমশ নানা বিষয়ের সমন্বয়ে জটিল হতে থাকে। রাজনৈতিক অর্থনীতি একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়, যখন ইংরেজ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ১৭৭৬ সালে তার বিখ্যাত বই “An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations” রচনা করেন। আধুনিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলাে অ্যাডাম স্মিথের এ বইটি।।
৮…
….

.
….
.
.
.



.

কাজ : অর্থনীতির উৎপত্তি ও বিকাশ ধারাবাহিকভাবে লিখ।
২০১৮
অর্থনীতি পরিচয়
১.২ দুটি মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা : দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব মানুষ যা চায় তার সবকিছু পায় না। মানুষের এই না পাওয়া-চাওয়ার নাম অভাব । মানুষের জীবনে অভাবের শেষ নেই । উদাহরণ দিয়ে বলি, তুমি একজন শিক্ষার্থী। ধরাে, তােমার কাছে এক হাজার টাকা আছে। তােমার শার্ট, প্যান্ট এবং ভালাে জুতা দরকার। এভাবে দেখা যাবে তােমার অনেক কিছু দরকার। কিন্তু তােমার আছে মাত্র এক হাজার টাকা। তোমার প্রয়ােজনের তুলনায় এই টাকার পরিমাণ অনেক কম। অর্থনীতিতে এটাকে সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা বলে । দুষ্প্রাপ্যতার জন্য মানুষ গুরুত্ব অনুযায়ী পছন্দ বা নির্বাচন করে । পছন্দ করার প্রয়ােজন না হলে অর্থনীতি বিষয়েরও প্রয়ােজন থাকত না। অর্থনীতি শেখায় কীভাবে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে। দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব (Scarcity and Unlimited Wants) চাওয়া অনুযায়ী সবকিছু না পাওয়াই মানুষের মূল সমস্যা। যেকোনাে দ্রব্য (যেমন: বই) বা সেবাসামগ্রী (চিকিৎসা সেবা) উৎপাদন করতে সম্পদ দরকার হয়। কিন্তু সম্পদ সীমিত”। সীমিত সম্পদ দিয়ে সীমিত দ্রব্য বা সেবা পাওয়া সম্ভব। সে জন্যই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সব অভাব পূরণ হয় না। দুষ্প্রাপ্যতার কারণ এটাই। সম্পদ অসীম হলে দুষ্প্রাপ্যতার সৃষ্টি হতাে না । বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এল. রবিন্স বলেন,“অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান, যা অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযােগ্য দুষ্প্রাপ্য সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধনসংক্রান্ত মানবীয় আচরণ বিশ্লেষণ করে।” অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েলসনের মতে, সম্পদ সীমিত বলেই সমাজে সম্পদের সবচেয়ে ভালােভাবে ব্যবহারের প্রশ্নটি গুরুত্ব পায় । সূর্যের আলাে, বাতাস ইত্যাদি প্রকৃতি থেকে পাওয়া জিনিসগুলাের চাহিদা অনেক। কিন্তু এগুলাে পেতে আমাদের তেমন কোনাে অর্থ খরচ করতে হয় না। এসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে সাধারণত অভাব দেখা দেয় না। যেহেতু মানুষের অভাব অনেক এবং সম্পদ সীমিত, তাই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সকল অভাব পূরণ হয় না। মানুষ অনেক অভাবের মধ্য থেকে কয়েকটি অভাব পূরণ করে। অভাবের গুরুত্ব বিবেচনা করে মানুষ এ অভাবগুলাে পূরণ করে। অতিপ্রয়ােজনীয় অভাবগুলাে মানুষ অগ্রাধিকারভিত্তিতে পূরণ করে। এটাই হলাে অভাব নির্বাচন বা বাছাই। ১.৩ অর্থনীতির ধারণা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে অর্থনীতি বিষয়ের পরিধিও অনেক বেড়েছে। অতীত ও বর্তমান অর্থনীতি বিষয়ের সমন্বয়ে অর্থনীতি বিষয় এখন অনেক উন্নত বা সমৃদ্ধ। প্রথমে যারা অর্থনীতি বিষয়ে উপস্থাপন করেছেন এদের মধ্যে অ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং জন স্টুয়ার্ট মিল অর্থনীতিকে সম্পদের উৎপাদন ও বন্টনের বিজ্ঞান বলে মনে করেন। এদের মধ্যে অ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয়। অর্থনীতির এই ধারা ক্লাসিক্যাল অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত। তখন অর্থনীতি বা Economics -এর নাম ছিল রাজনৈতিক অর্থনীতি বা Political Economy।
অ্যাডাম স্মিথের প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা : “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান, যা জাতিসমূহের সম্পদের ধরণ ও কারণ অনুসন্ধান করে।” “সম্পদকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি গড়ে ওঠে। তাই সম্পদ আহরণ ও উৎপাদনই মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল উদ্দেশ্য। স্মিথের সংজ্ঞার দুর্বলতা হলাে : ১. অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাবকে কীভাবে সীমিত সম্পদ দিয়ে মেটাবে, এই সংজ্ঞায় তার উল্লেখ নেই। ২. এই সংজ্ঞায় জাতীয়
সম্পদের উপর অধিক জোর দেওয়া হলেও ব্যক্তি মানুষ ও তার কাজ-কর্মকে অবহেলা করা হয়েছে। ৩. ও সম্পদ আহরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও কী উপায়ে সম্পদ যােগাড় করা হবে তা বলা হয়নি। ৪. এই
সংজ্ঞায় সম্পদ বলতে দ্রব্যকেই বােঝানাে হয়েছে কিন্তু সেবা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

অর্থনীতি

কালে

উৎপাদনের উপকরণ
শ্রম, ভূমি, মূলধন উৎপাদনের
উপকরণসমূহের মজুরি, খাজনা, সুদ
বাজার
আয়
চিত্র : আয়ের বৃত্তাকার প্রবাহ উপরােক্ত চিত্রে দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতিতে দু-ধরনের প্রতিনিধি (Agent) থাকে। যথা- ফার্মসমূহ ও পরিবারসমূহ । ফার্ম বা ফার্মের মালিকরা উৎপাদনের উপাদানগুলাে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে সেগুলাে সংগঠিত করে দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করেন এবং সেগুলােই বাজারে সরবরাহ বা বিক্রয় করেন। অন্য দিকে পরিবারসমূহ” তাদের মালিকানাধীন উৎপাদানের বিভিন্ন উপাদান যেমন:- শ্ৰম, ভূমি ও মূলধন বিক্রি করে আয় বা উপার্জন করেন ( শ্রমিক আয় করেন মজুরি, ভূমির মালিক
উপার্জন করেন খাজনা এবং মূলধনের মালিক লাভ করেন সুদ, আর এদের সকলের খরচ মিটিয়ে উদ্যোক্তা * নিজেদের জন্য বাড়তি লাভ রেখে বাজারে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার বিষয়টি বিক্রয় করেন। সে জন্য
২০১৮
অর্থনীতি
:
:





উদ্যোক্তার অবশিষ্ট আয়টিকে বলা হয় মুনাফা)। পরিবারসমূহ তাদের আয়-উপার্জনের সাহায্যে ফার্মের কাছ থেকে ক্রয় করেন দ্রব্য বা সেবা। এ ভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবা এবং আয়ের বৃত্তাকার প্রবাহের মাধ্যমে সমগ্র
অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। একেই আমরা নাম দিয়েছি “আয়ের বৃত্তাকার প্রবাহ”। ১.৬ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Different Types of Economic Systems) আমরা জানি, অর্থনীতি হচ্ছে চয়ন বা নির্বাচনের (Choice) বিজ্ঞান। এটাও আমরা শিখেছি যে অর্থনীতি সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উৎপাদন, সর্বোচ্চ ভােগ এবং সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধনের জন্য সঠিক পথটি বাছাই করার নিরন্তর চেষ্টা চালায়, সে জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সর্বদা তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ক) আমরা কী উৎপাদন করব এবং কী উৎপাদন করব না? যেমন: আমরা কি বন্দুক উৎপাদন করব, না কি কাপড় উৎপাদন করব?
খ) আমারা যা উৎপাদন করতে চাই, তা উৎপাদন করার জন্য কী ধরনের প্রযুক্তি বা যন্ত্র ব্যবহার করব? কাপড় কি আমরা শ্রম নিবিড় প্রযুক্তি তাঁত দিয়ে তৈরি করব, না কি পুঁজি নিবিড় মেশিনে তৈরি করব? গ) আমরা যা উৎপাদন করব তা আমরা কাদের জন্য করব? কারা এটা ভােগ করবেন? এই প্রশ্নগুলাের উত্তর প্রদানই হচ্ছে একেক দেশের একেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান কাজ। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রধানত তিনটি পন্থার সন্ধান পাই এবং সেই হিসাবে পৃথিবীর সমস্তু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলােকে প্রধানত তিনটি মূল পদ্ধতিতে বিভক্ত করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, এসব পদ্ধতির কোনােটিই নিখাদভাবে ক্লিাজ করে না। সর্বদাই বাস্তবে তারা মিশ্র অবস্থায় বিরাজ করে। নিচে তাদের নিখাদ
অবস্থায় পৃথক বৈশিষ্ট্যগুলাে আলাদা আলাদাভাবে তুলে ধরা হলাে ১। বাজার পদ্ধতি বা ধনতান্ত্রিক পদ্ধতি (Market System or Capitalist System) ক) এই পদ্ধতিতে সমস্ত সিদ্ধান্তই বাজারের যুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। যেমন- যে পণ্যের চাহিদা বাজারে বেশি হবে এবং যার দাম বেশি হবে, সেটাই বেশি বেশি করে উৎপাদিত হবে। বাজারের আপেক্ষিক চাহিদাই নির্ধারণ করে দেবে উৎপাদনের বিন্যাস। খ) যে প্রযুক্তিতে একটি পণ্য তৈরি করার বাজার নির্ধারিত খরচ সর্বনিম, সে প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ঐ পণ্য তৈরি হবে। গ) বাজারে যে উৎপাদন উপকরণের দাম যেরকম নির্ধারিত হবে, তার মালিকরা ঠিক সেরকম আয় ও ভােগ করবেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এ ব্যবস্থায় বাজার দ্বারাই উপকরণের মালিকদের এবং ক্রেতা-বিক্রেতার প্রতিযােগিতার মাধ্যমে নির্ধারিত হচ্ছে কী উৎপাদিত হবে, কীভাবে উৎপাদিত হবে এবং উৎপাদনের বণ্টন কি রকম হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা হচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে সমস্ত সম্পদের তথা উৎপাদন উপকরণের ব্যক্তি মালিক এবং বাজারে তাদের আন্তক্রিয়ার মাধ্যমেই এসবের দাম ও অন্য সবকিছু নির্ধারিত হয়। এ
;
;
:
২০১৮
অর্থনীতি পরিচয়


২। নির্দেশমূলক পদ্ধতি (Command System) এই পদ্ধতিতে কি উৎপাদন হবে, তা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ। এখানে সমস্ত সম্পদ ও উৎপাদন উপকরণের মালিক হচ্ছে রাষ্ট্র বা সমাজ। তাদের প্রতিনিধি হিসাবে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ই চূড়ান্ত বিচারে কী উৎপাদিত হবে, তার জন্য কী প্রযুক্তি বাছাই হবে, কার কী দাম হবে, কার কী আয় ও ভােগ হবে ইত্যাদি সব নির্ধারণ করে দেন। তাদের এই আদেশ অনেকটা আইনের মতাে সকল অর্থনৈতিক খেলােয়াড়কে মেনে চলতে হয়। তাই এই ব্যবস্থাকে নির্দেশমূলক ব্যবস্থা (Command Systern) হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বার্থ বা মুনাফার চেয়ে সামাজিক স্বার্থ বা সামাজিক কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ৩। প্রথাগত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Traditional Economic system) পৃথিবীতে কোনাে কোনাে প্রাচীন সমাজে যে আদিম অর্থনীতি রয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রীয় বা পরিকল্পনা কমিশন বা মুক্তবাজারের কোন শক্তিশালী উপস্থিতি নেই। সেসব সমাজে ব্যক্তি সচরাচর ধর্মীয় মূল্যবােধ বা আবহমানকাল ধরে চলে আসা বাবা-দাদাদের প্রথা অনুযায়ী অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিচালনা করেন। এ সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যেহেতু প্রথা ও সামাজিক বিশ্বাসই সবকিছু নির্ধারণ করে দেয় (অর্থাৎ কী উৎপাদন হবে, কী ভােগ করা যাবে, কোন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে, কারা
বেশি পাবে, কারা কম পাবে ইত্যাদি সকল কিছু ) সেহেতু এসব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রত্যাগত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলা হয়। আমাদের দেশে আদিবাসী জনগােষ্ঠীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা যুক্তরাষ্ট্রের আমিষ সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা কোন কোন ইসলামি দেশে ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আমরা এই ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। বর্তমান পৃথিবীতে মূলত বাজার ও পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং কিছু কিছু দেশে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং ইরান ও সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে বলে ধরা হয়। কিন্তু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করলে দেখা যাবে এসব দেশে মূল বা প্রধান ব্যবস্থার চরিত্র একটি হলেও এখানে সর্বত্রই অন্য ব্যবস্থাগুলােও অংশত কাজ করে। সে জন্যই চূড়ান্ত বিশ্লেষণে বলা হয় যে পৃথিবীর সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই শেষ বিচারে একটি মিশ্র ব্যবস্থা। আমাদের বাংলাদেশেও আমরা একটি মিশ্র ব্যবস্থা দেখতে পাই। এখানে ব্যাক্তি খাতে বাজারই প্রধান নিয়ন্ত্রক, রাষ্ট্রখাতে রাষ্ট্র বা পরিকল্পিত সিদ্ধান্তই প্রধান নিয়ন্ত্রক, ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলিতে (যেমন ইসলামি ব্যাংক) শরিয়ার হুকুমই প্রধান নিয়ন্ত্রক, আবার এই সবগুলাে ক্ষেত্ৰই একে অপরের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হচ্ছে। বাজার, আইন, ইসলামি মূল্যবোেধ কোনােটিই আমাদের অর্থনীতিতে একক বা একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তারে সক্ষম হয়নি। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা (Capitalistic Economy) এই ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানগুলাে ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং প্রধানত বেসরকারি উদ্যোগে, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ ধরনের অর্থব্যবস্থাকে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বলে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ফরাসি বিপ্লবের ফর্মা-২, অর্থনীতি, ৯ম-১০ শ্রেণি


,
,
অর্থনীতি
মধ্য দিয়ে সমগ্র ইউরােপে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সূত্রপাত ঘটে। ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ও তাঁর অনুসারীগণ এ ব্যবস্থা সমর্থন করেন।
Sw



l
” ।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Capitalistic Economy) ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলাে : ১। সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা ; ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সমাজের অধিকাংশ সম্পদ বা উৎপাদনের
উপকরণগুলাে ব্যক্তিমালিকানায় থাকে। ব্যক্তি এগুলাে হস্তান্তর ও ভােগ করে থাকে। ২। ব্যক্তিগত উদ্যোগ : ধনতন্ত্রে অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন: উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন, ভােগ
প্রভৃতি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়। এসব উদ্যোগে সরকারের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। ৩। অবাধ প্রতিযােগিতা। এ ব্যবস্থায় দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনে প্রথমে অনেক ফার্ম অবাধে প্রতিযােগিতা
করে। ফলে তখন দ্রব্যের দাম কম থাকে এবং নতুন নতুন আবিষ্কার সম্ভব হয়। ৪। স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা : বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার দরকষাকষির মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়। ৫। মুনাফা অর্জন : ধনতন্ত্রে উৎপাদক সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য উৎপাদন করে । ৬। ভােক্তার স্বাধীনতা : প্রত্যেক ভােক্তা তার নিজস্ব পছন্দ, ইচ্ছা ও রুচি অনুযায়ী অবাধে দ্রব্য ক্রয় ও ভােগ
করতে পারে। ভােক্তার চাহিদা ও মুনাফার সুযােগ অনুযায়ী উৎপাদনকারী দ্রব্য সরবরাহ করে। ৭। আয় বৈষম্য : ধনতান্ত্রিক সমাজে বিত্তবান ও সাধারণ জনগণের আয়ের মধ্যে বৈষম্য বেশি থাকে।
ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে কিছুটা বেকারত্ব অনিবার্য।
৮। সরকারের ভূমিকা : এ ব্যবস্থায় সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, দেশরক্ষা, সম্পত্তির অধিকার রক্ষায় নিয়ােজিত
থাকে।
বস
;


  • অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কেউ নিঃস্বার্থভাবে নয়, বরং প্রত্যেকে নিজ নিজ স্বার্থে অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে।
    সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বা নির্দেশমূলক অর্থনীতি (Socialistic or Command Economy) সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সমাজের অধিকাংশ সম্পদ ও উৎপাদনের উপাদানের উপর রাষ্ট্রের বা সমাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত থাকে। অধিকাংশ শিল্প-কারখানা ও উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকার বা সমাজ এবং সেগুলাে সরকারি বা সামাজিক নির্দেশে পরিচালিত হয়ে থাকে। কোন কোন দ্রব্য, কী পরিমাণে, কীভাবে এবং কার জন্য উৎপাদিত হবে তা সরকার বা রাষ্ট্র নির্ধারণ করে।
    ২০১৮
    অর্থনীতি পরিচয়
    ;

  • +

    ৩। সরকারি উদ্যোগ : মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা
    হয়। দেশের মৌলিক ও ভারী শিল্প, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকার পরিচালনা
    করে থাকে। ৪। মুনাফা অর্জন : মিশ্র অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে
    মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়। তবে তা অতিরিক্ত একচেটিয়া মুনাফা নয়। ৫। ভােক্তার স্বাধীনতা : এ ব্যবস্থায় ডােক্তা সাধারণ দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও ভােগের ক্ষেত্রে অবাধ
    স্বাধীনতা ভােগ করে। তবে সরকার প্রয়ােজন মনে করলে দ্রব্যের দামের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং প্রয়ােজন অনুসারে কোনাে দ্রব্যের উৎপাদন কিংবা ভােগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
    যেমন- ধূমপান, মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও ভােগ ইত্যাদি। বিশ্বে কোথাও বিশুদ্ধ ধনতন্ত্র বা বিশুদ্ধ সমাজতন্ত্র না থাকায় অনেকে মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে একটি উন্নত
    অর্থব্যবস্থা বলে মনে করেন।

ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Islamic Economic System) ইসলামের মৌলিক নিয়ম-কানুনের উপর বিশ্বাসকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অর্থব্যবস্থাকে ইসলামি অর্থব্যবস্থা বলা হয় ।

ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Islamic Economy) ইসলামী অর্থব্যবস্থায় পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ মানবজাতির কল্যাণে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ব্যবস্থার উল্লেখযােগ্য প্রচলিত বৈশিষ্ট্যগুলাে নিম্নরূপ:


১। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস : ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতিমালা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের ধর্মীয় দর্শন, ধর্মগ্রন্থের
বিধান ও ধর্মীয় প্রচলিত প্রথা ও বিধি-বিধান অনুযায়ী প্রণীত ও পরিচালিত হয়। ২। সুদমুক্ত আমানত : ইসলামি অর্থনীতিতে সুদ গ্রহণের স্বীকৃতি নেই। এখানে ব্যাংক-ব্যবস্থায় সুদমুক্ত
আমানতের ব্যবস্থা করা হয়। ৩। যাকাত ও ফিতরা : এ ব্যবস্থায় যাকাতভিত্তিক বণ্টন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে
যাকাত ও ফিতরার মাধ্যমে ধনীদের নিকট থেকে অর্থ গ্রহণ করে তা দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হয়।
}
| কাজঃ বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার সাথে কোন অর্থব্যবস্থার মিল রয়েছে মতামত দাও।
২০১৮
অর্থনীতি পরিচয়
অনুশীলনী বর্ণনামূলক প্রশ্ন
১. অর্থনীতির উৎপত্তি ও বিকাশ সম্বন্ধে আলােচনা কর। ২. অর্থনীতির সংজ্ঞা দাও। কোন সংজ্ঞাটি অধিক গ্রহণযােগ্য এবং কেন? ৩. অর্থনীতির দশটি নীতি আলােচনা কর ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন।
১. দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব বলতে কী বােঝায়? ২. অ্যাডাম স্মিথের প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা দাও। ৩. আয়ের বৃত্তাকার প্রবাহ বলতে কী বােঝায়? ৪. ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কী? ৫. মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কী?
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন।
১. অর্থনীতির জনক কে?
ক. ডেভিড রিকার্ডো গ. অ্যাডাম স্মিথ
খ, এরিস্টটল
ঘ, এল রবিনস
২. অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংগঠিত করার জন্য বাজার একটি উত্তম পন্থা। কেননা এতে
i. দর-কষাকষি করা যায় ii. সস্তায় ভােগ্যদ্রব্য ক্রয় করা যায়।
iii. চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন করা যায় নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii


  • L
    ,
    গ. ii ও iii
    ঘ. i, ii ও iii নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও নাবিল বাজারে চিনি কিনতে গিয়ে দেখলেন, চিনির দাম অনেক বেশি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ক্রেতা বলল, রাস্তার ওপারে এই চিনি সরকারি বিক্রয় কেন্দ্রে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ৩. নাবিলের দেশে কোন ধরনের অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান?
    ক. ইসলামি
    খ, মিশ্র
    গ. ধনতান্ত্রিক
    ঘ, সমাজতান্ত্রিক
    “”
    = ৩il
    .
    ২০১৮
    অর্থনীতি
    ৪. নাবিলের দেশের অর্থব্যবস্থায়
    ক. আয়বৈষম্য দেখা দেয়
    খ. সুদবিহীন ঋণের লেনদেন হয়
    স্থিতিশীলতা বজায় থাকে
    ঘ, ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতা থাকে না
    সৃজনশীল প্রশ্ন ১. রুমি ও তার প্রবাসী বন্ধুর টেলিফোনে কথােপকথন
    রুমি : প্রতি মাসে চালের খরচ বেড়েই চলেছে।
    সুমি : আমার মাসিক খরচ সব সময় একই থাকে।
    রুমি : তােমাদের দেশে এটি কীভাবে সম্ভব?
    সুমি : কেউ ইচ্ছে করলেই এ দেশের দ্রব্যের দাম বাড়াতে পারে না। ক. ভূমিবাদীদের মতে উৎপাদনশীল খাত কোনটি? খ. দুষ্প্রাপ্যতা বলতে কী বােঝায়?
    গ, সুমির দেশে কোন অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর ।
    ঘ,
    সুমির দেশের অর্থব্যবস্থার সাথে মিশ্র অর্থব্যবস্থার পার্থক্য বিশ্লেষণ কর।
    ২. আসাদ দীর্ঘদিন ‘A’ দেশে বাস করেন। সম্প্রতি তিনি দেশে বেড়াতে এসে ছােট ভাইকে তার প্রবাসী
    জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শােনান। সেখানকার মানুষের মাথাপিছু আয় অত্যন্ত বেশি। সেখানে তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তার মালিককে কারখানা প্রতিষ্ঠার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হয়নি। আবার সে তার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনাে দ্রব্য ভােগ করতে পারে।
    কখ
    XA
    ক. অ্যাডাম স্মিথের প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞাটি লেখ ।
    খ. অর্থনীতিতে প্রণােদনার গুরুত্ব বর্ণনা কর।
    গ. ‘A’ দেশে প্রচলিত অর্থব্যবস্থার স্বরূপ ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘A’ দেশের অর্থব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার পার্থক্য বিশ্লেষণ কর।
    হয়
    .
    দ্বিতীয় অধ্যায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ
    The Important Ideas of Economics অর্থনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা জরুরি। সম্পদ ও দ্রব্যের সংজ্ঞা ও এর শ্রেণি বিভাগ, সুৰােগ বন্ধু ও চল, আয়, সঞ্চ, বিৰিয়ােগ, অর্থনৈতিক ও অ-অর্থনৈষ্ঠিক কার্যাবলি এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এ অধ্যায়ে সংক্ষেপে আলোচনা কয়া হয়েছে। অর্থনীতির মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে এ মৌলিক ধারণাগুলাে অর্থনীতিকে বুঝতে সহায়ক হবে।
    এই অধ্যায় পাঠশেবে আমি
  • অর্থনৈতিক সম্পদের ধারণা ৰাস্তা করতে পারব # প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ এবং উৎপাদিত সম্পদের মধ্যে তুলনা করতে পারব
    • বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সম্পদ টিহিত করতে পারব। * এ তা বর্ণনা কতে পারব
    • অলঙ্ক দ্রব্য এবং অর্থনৈতিক দ্রব্যের বা পণ্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারব
    • স্থায়ী ও অস্থায়ী ভােগদ্রব্যের তুলনা করতে পারব।
    • মধ্যবর্তী দ্রব্য ও মূলধনী দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারব।
    • সুযােগ ব্যয় ও চয়নের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পাৱৰ * আয়, সঞ্চয় ও বিনিয়োপের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারব
    • বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন অর্থনৈষ্ঠিক কার্যাবলি খতিওয়ারি তালিকা তৈরি করতে পারব।
    অর্থনীতি
    ২.১ অর্থনৈতিক সম্পদ আমরা সবাই সম্পদ’ শব্দটির সাথে কমবেশি পরিচিত। আমাদের প্রতিদিনের আলােচনায় অনেকভাবে সম্পদ শব্দটি আসে। যেমন মি. সুজন অনেক সম্পদের মালিক। একজন অর্থনীতিবিদের কাছে সব জিনিস সম্পদ নয়। অর্থনীতিতে সম্পদ হলাে সেই সমস্ত জিনিস বা দ্রব্য, যেগুলাে পেতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হয়। সংক্ষেপে আমরা এ দ্রব্যগুলােকে অর্থনৈতিক দ্রব্যও বলে থাকি। যেমন- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, টিভি ইত্যাদি দৃশ্যমান বস্তুগত সম্পদ এবং ডাক্তারের সেবা, শিক্ষকের পাঠদান ইত্যাদি অদৃশ্যমান বা অবস্তুগত সম্পদ। উল্লিখিত জিনিসগুলাে পেতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হবে। কোনাে জিনিসকে যদি অর্থনীতিতে সম্পদ বলতে হয়, তবে তার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। বৈশিষ্টগুলাে হলাে
    ১। উপযােগ : উপযােগ বলতে বােঝায় কোনাে দ্রব্যের মানুষের অভাব মেটানাের ক্ষমতা। কোনাে দ্রব্য
    সম্পদ হতে হলে সেই দ্রব্যের উপযােগ সৃষ্টির ক্ষমতা থাকতে হবে। উপযোগ নেই এমন দ্রব্য বা সেবা
    মানুষ অর্থ দিয়ে কেনে না। ২। অপ্রাচুর্যতা: কোনাে দ্রব্য সম্পদ হতে হলে তার পরিমাণ ও যােগান সীমিত থাকবে। যেমন : নদীর পানি,
    বাতাস প্রভৃতির যােগান প্রচুর। এগুলাে সম্পদ নয়। তবে শ্রম ব্যবহার করে পানিকে বােতলবন্দি করলে পানিসম্পদে পরিনত হয়। অন্যদিকে জমি, গ্যাস, যন্ত্রপাতি -এগুলাে চাইলেই প্রচুর পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ এগুলাে আমাদের কাছে অপর্যাপ্ত দ্রব্য। এগুলােও সম্পদ।
    ৩। হস্তাম্ভরযােগ্য : সম্পদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলাে এর হস্তান্তরযােগ্যতা! হস্তান্তরযােগ্য বলতে | বােঝায় হাত বদল হওয়া। অর্থাৎ যে দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায়, তা-ই হলাে সম্পদ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভাকে অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ বলা যাবে না। কারণ তার প্রতিভাকে
    হস্তান্তর বা মালিকানা বদল করা সম্ভব নয়। আবার টিভির মালিকানা বদল করা যায় বলে টিভি সম্পদ। ৪। বাহ্যিকতা : যে সমস্ত দ্রব্য মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ বােঝায় তা অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ নয়।
    কেননা এর কোনাে বাহ্যিক অস্তিত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। যেমন : কোনাে ব্যক্তির কম্পিউটারের উপর বিশেষ অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান কিংবা কারাে শারীরিক সৌন্দর্য বা চারিত্রিক গুণাবলিকে সম্পদ বলা যাবে না। তবে পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিতে নানাভাবে এগুলােকেও বিক্রয়যােগ্য সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।

    ;
    এয়র্যোগ
    |

:
সম্পদের শ্রেণিবিভাগ উৎস বা উৎপত্তির দিক থেকে সম্পদ তিন প্রকার। যথা ১। প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া যেসব দ্রব্য মানুষের প্রয়ােজন মেটায়, তাকে প্রাকৃতিক
সম্পদ বলে। যেমন- ভূমি, বনভূমি, খনিজ সম্পদ, নদ-নদী ইত্যাদি।
২০১৮
অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ
২। মানবিক সম্পদ : মানুষের বিভিন্ন প্রকার যােগ্যতা ও দক্ষতাকে মানবিক সম্পদ বলা হয়। যেমন
শারীরিক যােগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা, সাংগাঠনিক ক্ষমতা ইত্যাদি মানবিক সম্পদ। ৩। উৎপাদিত সম্পদ : প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যে সম্পদ সৃষ্টি হয় তাকে উৎপাদিত
সম্পদ বলা হয়। যেমন- কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, যাতায়াত ও যােগাযােগব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি মানুষ তৈরি করে বলে এগুলাে উৎপাদিত সম্পদ।
।।
কাজ : অর্থনীতির ভাষায় নিচের কোনগুলাে সম্পদ তা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
| গম, চাল, কবির প্রতিভা, কম্পিউটারের অভিজ্ঞতা, নদীর বালি ।
।।

T



»
আ.

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদের বিবরণ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলাের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জনবহুল আমাদের দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় অত্যন্ত কম। উন্নয়নের সাথে দেশের অর্থনৈতিক সম্পদের বিশেষ সম্পর্ক থাকে। এ দেশের অর্থনৈতিক সম্পদের বিবরণ নিচে দেওয়া হলাে ক. কৃষি সম্পদ বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রয়েছে পলিসমৃদ্ধ উর্বর কৃষিজমি। আমাদের জমির উর্বরতা, অনুকূল আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত, নদ-নদী প্রভৃতি কৃষি উৎপাদনের সহায়ক। এ দেশে প্রায় ৯০,৯৯০ বর্গ কি.মি. চাষযােগ্য কৃষিজমি রয়েছে। আমাদের কৃষিক্ষেত্রে ধান, গম, ডাল, আলু, তৈলবীজ, ফলমূল প্রভৃতি খাদ্যশস্য এবং পাট, ইক্ষু, চা, তামাক, রেশম প্রভৃতি অর্থকরী ফসল উৎপন্ন হয়। দেশের প্রায় ৬৩% প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। জাতীয় আয়ের প্রায় ১৬% ভাগ কৃষি থেকে আসে।


খ, খনিজ্ঞ সম্পদ
বাংলাদেশ খনিজ সম্পদে তেমন সমৃদ্ধ নয়। এখানে এ পর্যন্ত যেসব খনিজ সম্পদ আবিষ্কৃত হয়েছে,তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলাে :

১. প্রাকৃতিক গ্যাস : প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। ২০১৬ সালে পর্যন্ত দেশে ২৬টি
গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। সেখানে গ্যাসের মােট মজুদ প্রায় ৩৮.০২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে কেবল ২০টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে । উৎপাদনরত গ্যাসক্ষেত্রগুলাে হলাে বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, কৈলাসটিলা, রশীদপুর, সিলেট, তিতাস, বেলাবাে (নরসিংদী), মেঘনা, সাঙ্গু, সালদা নদী, জালালাবাদ, বিয়ানিবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী,বিবিয়ানা ও বাঙ্গুরা ইত্যাদি। এ গ্যাস রাসায়নিক সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে, কলকারখানা ও গৃহে এ গ্যাস জ্বালানি
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফর্মা-৩, অর্থনীতি, ৯ম-১০ শ্রেণি
অর্থনীতি
RE।
t১া ।
.
এi If
চুনাপাথর : সিমেন্ট, কাচ, কাগজ, সাবান, ব্লিচিং পাউডার প্রভৃতি উৎপাদনে চুনাপাথর ব্যবহৃত | হয়। বাংলাদেশের সিলেটের ভাঙ্গারহাট ও বাগলীবাজার, সুনামগঞ্জের টেকেরহাট, জয়পুরহাটের
জামালগঞ্জ এবং কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে চুনাপাথরের মজুদ রয়েছে। ৩. চীনামাটি : ময়মনসিংহের বিজয়পুর ও নওগাঁ জেলার পত্নীতলায় চীনামাটির মজুদ রয়েছে। এটি
বাসনপত্র, সেনিটারি দ্রব্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। ৪, কয়লা : বাংলাদেশের সিলেট, রাজশাহী, জয়পুরহাট, ফরিদপুর ও দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ায় কয়লার
সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্প্রতি দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। ৫. কঠিন শিলা : দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া এবং রংপুর জেলার রাণীপুকুরে কঠিন শিলার মজুদ
রয়েছে। রাস্তা, রেলপথ, বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি কাজে এ শিলা দরকার হয়।
…..
৬. সিলিকা বালু : সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও জামালপুরে সিলিকা বালুর মজুদ রয়েছে। এটি কাচ, রং,
রাসায়নিক দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

  • ০৩

    *’

    ৭. গন্ধক : বারুদ তৈরি, দিয়াশলাই কারখানা, তেল পরিশােধন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গন্ধক লাগে। চট্টগ্রামের
    কুতুবদিয়া দ্বীপে গন্ধক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
    ৮. খনিজ তেল : সিলেটের হরিপুরে খনিজ তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশের উপকূলীয় এলাকা, পার্বত্য
    চট্টগ্রাম ও সিলেটে তেল অনুসন্ধানের কাজ চালানাে হচ্ছে।

    ৯. তামা : রংপুর জেলার রাণীপুকুর ও পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার স্তরে

সামান্য তামার সন্ধান পাওয়া গেছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও তার, মুদ্রা প্রভৃতি তৈরির জন্য তামা ব্যবহার করা হয়।

=
|
|
গ. বনজ সম্পদ বনভূমি ও বনজ সম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত অবস্থা ভালাে রাখার জন্য যেকোনাে দেশের কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের মােট বনভূমি মােট ভূখণ্ডের প্রায় শতকরা ১১.১ ভাগ যা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। যেমন, আমেরিকায় শতকরা ৩৩.৮৪ ভাগ, জাপানে শতকরা ৬৭ ভাগ, বার্মায় শতকরা ৬৩ ভাগ এবং ভারতে শতকরা ২৪ ভাগ বনাঞ্চল রয়েছে। বাংলাদেশের সমগ্র বনভূমিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।
২০১৮
অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ
১. সুন্দরবন : খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও বরগুনা জেলার সমুদ্র উপকূলে এ বন অবস্থিত। এর
আয়তন প্রায় ৬,০১৭ বর্গকিলােমিটার। এ বনাঞ্চলে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, কেওড়া, বাইন প্রভৃতি মূল্যবান গাছ জন্মায়। সুন্দরবনে পৃথিবী বিখ্যাত বাঘ রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান পশু-পাখি বাস করে।
২. চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি : এ দুটি জেলার প্রায় ১৩,২৯৫ বর্গকিলােমিটার পাহাড়ি এলাকা
জুড়ে এ বন বিস্তৃত। এ বনে সেগুন, গর্জন, গামারি, জারুল, শিমুল, চম্পা, বাঁশ, বেত প্রভৃতি গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।
.
মধুপুর ও ভাওয়াল বনভূমি : ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গড় এবং গাজীপুর জেলার ভাওয়ালের গড় মিলে এ বনভূমির আয়তন প্রায় ১০৬৪ বর্গকিলােমিটার। এখানে শাল, গজারি, বনজাম, কড়ই প্রভৃতি গাছ জন্মায়।
৪. সিলেটের বনভূমি : এ বনভূমি সিলেট জেলায় অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১,০৪০ বর্গকিলােমিটার।
এখানে শিমুল, বনজাম, বাঁশ, বেত প্রভৃতি বহু রকমের গাছ জন্মায়।
৫. দিনাজপুর ও রংপুরের বনভূমি : এ বন দেশের উত্তর-পশ্চিমে দিনাজপুর ও রংপুর জেলার বরেন্দ্র
ভূমিতে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৩৯ বর্গকিলােমিটার। এখানে শাল, গজারি প্রভৃতি গাছ জন্মায় ।
f
দ্ব, প্রাণিজ সম্পদ
বাংলাদেশের সর্বত্র বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি দেখা যায়। গৃহপালিত পশু-পাখির মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হাঁস, মুরগি প্রভৃতি প্রধান। এ ছাড়া সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে রয়েছে বাঘ, হাতি, হরিণ প্রভৃতি মূল্যবান জীবজন্তু ও অসংখ্য প্রজাতির পাখি। আমাদের নদ-নদী, বিল, হাওর, পুকুর ইত্যাদি জলাশয় এবং বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন রকম মাছ পাওয়া যায়। এ ধরনের সম্পদ আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি করে। চামড়াশিল্পের কাঁচামালের যােগান দেয়। এ সম্পদ রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ঙ, শক্তি সম্পদ কলকারখানা, যানবাহন ও যােগাযােগ, যান্ত্রিক চাষাবাদ, গৃহকর্ম প্রভৃতি ক্ষেত্রে শক্তি সম্পদের ব্যবহার
অপরিহার্য। কয়েকটি উৎস থেকে শক্তি পাওয়া যায়। এগুলাে হলাে কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, = পানি, আণবিক শক্তি, সৌরশক্তি এবং বিভিন্ন প্রকার প্রচলিত জ্বালানি সামগ্রী।
২০১৮
অর্থনীতি
বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে কয়লার সন্ধান পাওয়া গেলেও তা এখনও উত্তোলন করা শুরু হয়নি। সিলেটের হরিপুরে পেট্রোলিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রয়ােজনীয় পরিমাণ পেট্রোলিয়াম বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আণবিক শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনও এ দেশে শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশে শক্তির যােগান বহুলাংশে প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ ও প্রচলিত উপকরণ থেকে আসে। আমরা প্রাকৃতিক গ্যাস কলকারখানা, গৃহকর্ম ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করি। এ দেশে পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। একে পানি বিদ্যুৎ বলে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই নামক স্থানে কর্ণফুলি নদীর তীরে দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি অবস্থিত। গ্যাস, তেল, কয়লার সাহায্যে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তাকে তাপ বিদ্যুৎ বলে। বাংলাদেশে নিম্নলিখিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে খনিজ তেল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় :
{

২. আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩. ঘােড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নরসিংদী ৪. শাহজিবাজার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিলেট ৫, চট্টগ্রাম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

i

s
এ দেশে বিভিন্ন প্রকার প্রচলিত জ্বালানি যেমন, কাঠ, খড়, গােবর, পাটখড়ি, তুষ, পাতা ইত্যাদি থেকেও তাপশক্তি সৃষ্টি হয়। বর্তমান সরকার কুইক রেন্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

উল্লেখ করা দরকার, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বায়ুপ্রবাহ, সৌর তাপ ও জৈব গ্যাসকে শক্তি উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। আধুনিক বিশ্বে আণবিক শক্তির উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এসব উৎস থেকে শক্তি উৎপাদনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে।

=
অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ

.
চ, পানি সম্পদ পানি একটি মৌলিক প্রাকৃতিক সম্পদ, যা প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। দেশের কৃষিজ, বনজ, প্রাণিজ ও শক্তি সম্পদের অস্তিত্ব রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য পানি সম্পদ প্রয়ােজন। বাংলাদেশে পানির উৎস প্রধানত তিনটি, যথা : ১. নদ-নদী, খালবিল, পুকুর ও সমুদ্র, ২. বৃষ্টিপাত এবং ৩. ভূ-গর্ভস্থ পানি। এ তিনটি উৎসের পানি আমাদের কৃষির জন্য অপরিহার্য। পানির যােগান কম বা বেশি হলে কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অভ্যন্তরীণ জলাশয় ও সমুদ্র এলাকায় রয়েছে মাছ ও অন্যান্য জলজ সম্পদ। নদীর স্রোত থেকে উৎপন্ন হয় পানি বিদ্যুৎ। আমাদের অসংখ্য নদ-নদী, খালবিল ও জলাশয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এ দেশের যাতায়াতব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্য। নদ-নদীর পানি ও বৃষ্টিপাত দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের জন্য অনুকূল প্রভাব সৃষ্টি করে। পানি সম্পদের উন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়বে।
.

h
er
If U


  • }
    ,
    ২২ দ্রব্য
    দ্রব্য বলতে আমরা সাধারণত শুধু বস্তুগত সম্পদকে বুঝে থাকি। মানুষের অভাব মেটাবার ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তুগত সব জিনিসকে আমরা দ্রব্য বলে থাকি। অর্থাৎ যে জিনিসের উপযােগ আছে, অর্থনীতিতে তা-ই দ্রব্য। দ্রব্যকে নানাভাবে শ্রেণিবিভক্ত করা যায় যেমন: অবাধলভ্য দ্রব্য : যে সমস্ত দ্রব্য বিনামূল্যে পাওয়া যায় তাকে অবাধলভ্য দ্রব্য বলে। এসব দ্রব্য প্রকৃতিতে অবাধে পাওয়া যায় এবং এর যােগান থাকে সীমাহীন। যেমন- আলাে, বাতাস, নদীর পানি ইত্যাদি। অর্থনৈতিক দ্রব্য : যে সমস্ত দ্রব্য পাওয়ার জন্য মানুষকে মূল্য প্রদান করতে হয় তাকে অর্থনৈতিক দ্রব্য বলা হয়। এদের যােগান সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বই, কলম, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি। ভােগ্য দ্রব্য : ভােগ বা ব্যবহারের মাধ্যমে যে সমস্ত দ্রব্যের উপযােগ নিঃশেষ করা হয় তাদেরকে ভােগ্য দ্রব্য বলে। যেমন, গাড়ি, বস্ত্র ইত্যাদি।
    স্থায়ী ভােগ্য দ্রব্য : যে সমস্ত ভােগ্য দ্রব্য দীর্ঘকাল ধরে ভােগ করা যায়, তাকে স্থায়ী ভােগ্য দ্রব্য বলে। যেমন- ফ্রিজ, গাড়ি, ঘরবাড়ি, জমি, খেলার মাঠ ইত্যাদি। অস্থায়ী ভােগ্য দ্রব্য : যে সমস্ত ভােগ্য দ্রব্য স্বল্পকালে ভােগ করা যায় এবং কোনাে ক্ষেত্রে একবার মাত্র ভােগ করা যায়, তাকে অস্থায়ী ভােগ্য দ্রব্য বলে। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, তরিতরকারি ইত্যাদি। মধ্যবর্তী দ্রব্য : যে সমস্ত উৎপাদিত দ্রব্য সরাসরি ভােগের জন্য ব্যবহার না করে উৎপাদনে উপকরণ হিসেবে
    ব্যবহার করা হয়, তাকে মধ্যবর্তী দ্রব্য বলে। মধ্যবর্তী দ্রব্য চূড়ান্ত উৎপাদনে নিঃশেষ হয়ে যায়। যেমন, ঃ কাঁচামাল, রসগােল্লা তৈরির জন্য ব্যবহৃত দুধ ও চিনি মধ্যবর্তী দ্রব্য।।
    রসগো?
    অর্থনীতি
    চুড়ান্ত দ্রব্য : যে সকল দ্রব্য উৎপাদনের পর সরাসরি ভােগে ব্যবহৃত হয়, তাদেরকে চূড়ান্ত দ্রব্য বলা হয়। যেমন-পাউরুটি, চেয়ার ইত্যাদি।
    মূলধনী দ্রব্য : যে সমস্ত উৎপাদিত দ্রব্য, অন্য দ্রব্য উৎপাদনে সাহায্য করে তাকে মূলধনী দ্রব্য বলে। যেমন- যন্ত্রপাতি, কারখানা, গুদামঘর ইত্যাদি। মূলধনী দ্রব্য বারবার উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়। মূলধনী দ্রব্য আবার মূলধনী দ্রব্য উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয়।
    পণ্য : যে সব দ্রব্য ও অবস্তুগত সেবা উপযােগসম্পন্ন এবং বিক্রয়যােগ্য, তাদেরকে পণ্য বলে। সকল দ্রব্য পণ্য নয়। কিন্তু সকল অর্থনৈতিক দ্রব্যই পণ্য। সকল সেবা পণ্য নয়, কিন্তু সকল অর্থনৈতিক সেবাই পণ্য।
    কাজ : কোনটি কোন ধরনের দ্রব্য তা উল্লেখ কর- আলাে, নদীর পানি, টেবিল, জমি, অলংকার, যন্ত্রপাতি।
    :
    ও.

    !
    ২.৩ সুযােগ ব্যয় ও চয়ন (Opportunity Cost and Choice) সুযােগ ব্যয় : অর্থনীতিতে বহুল ব্যবহৃত একটি ধারণা সুযােগ ব্যয়’। মনে কর তুমি একজন শিক্ষার্থী। তুমি কি প্রতিদিন সব কাজ করতে পারবে? যেমন : তুমি একই সঙ্গে অর্থনীতি পরীক্ষা এবং মাঠে ক্রিকেট খেলা দেখতে পারবে না। তুমি যদি একটি কাজ করতে চাও তবে অবশ্যই ঐ সময়ে অন্য কাজটি করা সম্ভব হবে না। আরও একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, মনে কর তােমাদের এক বিঘা জমি আছে। এ জমিতে ধান চাষ করলে বিশ কুইন্টাল ধান উৎপাদন করা যায় । ঐ জমিতে ধান চাষ না করে যদি পাট চাষ করতে চাও তবে দশ কুইন্টাল পাট উৎপাদন করা যেত। এক্ষেত্রে বিশ কুইন্টাল ধানের সুযোেগ ব্যয় হলাে দশ কুইন্টাল পাট। সংক্ষেপে বলা যায়, কোনাে একটি জিনিস পাওয়ার জন্য অন্যটিকে ত্যাগ করতে হয় এই ত্যাগকৃত পরিমাণই হলাে অন্য দ্রব্যটির সুযােগ ব্যয়’ (Opportunity Cost)। সাধারণত নানারকম সুযােগ ব্যয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সুযােগ ব্যয়টিকেই অর্থনীতিতে সুযােগ ব্যয় হিসাবে গ্রহণ করা হয়।

চয়ন : জসীম একজন কৃষক, তার তিন বিঘার একটি জমি আছে। উক্ত জমির সম্পূর্ণটিতে ধান অথবা গম চাষ করতে পারেন। এছাড়াও জমির কিছু অংশে ধান এবং কিছু অংশে গম চাষ করতে পারেন। উক্ত জমিতে শুধু ধান চাষ করলে ১২০ কুইন্টাল ধান উৎপাদন হতে পারে। আবার শুধু গম চাষ করলে ৮০ কুইন্টাল গম উৎপাদন হতে পারে। এখন তিনি জমিটিতে কী চাষ করবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। ফসল উৎপাদনের জন্য তার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াই নির্বাচন বা চয়ন । অর্থনীতিতে সম্পদের স্বল্পতার জন্যই নির্বাচন করতে হয় এবং এটি ব্যক্তিপর্যায়ের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্পদের স্বল্পতার জন্য হয়ে থাকে ।

কাকা
:

{{.
,

Leave a Comment

Scroll to Top