ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (Directorate General of Forces Intelligence) বা সংক্ষেপে ডিজিএফআই বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশের ভিতরে ও বাইরে দেশের একমাত্র মিলিটারি গোয়েন্দা সংস্থা হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই )। আমেরিকার সিআইএ ও রাশিয়ার কেজিবির আদলে ডিজিএফআই তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ডিজিএফআইয়ের সদস্য হিসেবে নেওয়া হয় । বর্তমানে ১২০০০ হাজার কিংবা তারও বেশি সদস্য নিয়ে ডিজিএফআই তার মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করে থাকে।
ডিজিএফআই বর্তমানে 9 টি ব্রাঞ্চ ও১৯ টি বিভাগে ভাগ হয়ে গোয়েন্দা কর্মকান্ড পরিচালনা করে। জাতির নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জাতির জন্য দেখাও সোনা এই মর্মে উজ্জীবিত হয় বর্তমানে ডিজিএফআই এশিয়ার একটি অন্যতম প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে বিশ্বদরবারে অধিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে এর পথ চলার পর শুরু করার পর থেকে এর সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার সাথে সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গোয়েন্দা তৎপরতার সাথে জড়িয়ে রয়েছে। ডিজিএফআই বর্তমানে বিশ্বের 54 টি দেশে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং গোপন মিশন পরিচালনা করছে ।
ডিজিএফআই এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভিন্ন দেশের সামরিক তথ্য নেওয়া এবং দেশের সীমানার চারপাশের সকল সামরিক কর্মকাণ্ডকে নজরে রাখা। বাংলাদেশ বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষা হল ডিজিএফআই। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষায় এই গোয়েন্দা সংস্থা গৌরবের সাথে দায়িত্ব পালন করে থাকে ।
Director General | Tenure | |
---|---|---|
1 | Brigadier general Abdur Rauf | 1972-1975 |
2 | Colonel Jamil Uddin Ahmad | 1975 |
3 | Air vice-marshal Aminul Islam Khan | 1975-1977 |
4 | Wing commander Muhammad Hamidullah Khan | 1977-1979 |
5 | Major general Mohabbat Jan Chowdhury | 1979-1981 |
22 | Lieutenant general Molla Fazle Akbar | 2009-2011 |
23 | Lieutenant general Sheikh Mamun Khaled | 2011-2013 |
24 | Major general Mohammad Akbar Hossain | 2013-2017 |
25 | Major general Mohammad Saiful Abedin | 2017-current |
ডিজিএফআইয়ের প্রথম দায়িত্ব হলো ভিন্ন রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকান্ড কে নজরদারি রাখা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক , আইন শৃঙ্খলা ও ও ভিনদেশী গোয়েন্দা সংস্থার গোপন অপতৎপরতা সম্পর্কের খোঁজ রাখা এবং প্রয়োজনে যেকোনো ধরনের শক্তি ব্যবহার করা। যারা অনেকেই আমেরিকার সিআইএ দুর্ধর্ষ মিশন সম্পর্কে অবগত তারা ডিজিএফআই এর কর্মকান্ড সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। মূলত সামরিক বাহিনীর থেকে রিক্রুট করা ডিজিএফআই এর ইন্টেলিজেন্স এজেন্টরা সারাদেশে গোপন ভাবে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য এবং রাষ্ট্রের নিরপত্তার সাথে সাংঘর্ষিক যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
ডিজিএফআই’র লোগো
2014 সালের 14 মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিএফআইয়ের নতুন উদ্বোধন করেন এই লোগোর মাধ্যমে ডিজিএফআই এর কর্মকাণ্ড এবং কর্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। এই লোগোর মাঝখানে রয়েছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় ফুল শাপলা যা বাঙালি জাতির সক্রিয়তা কে ফুটিয়ে তোলে। শাপলা টির চারপাশে আটটি আলোর ধারা বিচ্ছুরণের একটি রেখা রয়েছে যা 8 টি মূলমন্ত্র কে প্রকাশ করে দেশপ্রেম দেশের প্রতি অনুগত, শৃঙ্খলা মনোযোগ সচেতনতা দায়িত্ববোধ কর্মপরিধি কে প্রকাশ কর্। নিচে বাংলাদেশ লেখার দুই পাশে দুটি করে চারটি তারা বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতি ডিজিএফআইয়ের অনুভূতি প্রকাশ করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র , ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র এই চারটি মূলনীতি চারটি তারার প্রকাশ। মধ্যবর্তী বেগুনি রং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নৌ বাহিনী ও বিমানবাহিনীর তিন রঙের সংমিশ্রণ। মাঝখানে মাকড়সার জাল ডিজিএফআইয়ের গোয়েন্দা তৎপরতা ও বিশাল নেটওয়ার্কিং এর বহি প্রকাশ করে
গঠিত | ১৯৭২ |
---|---|
সদর দপ্তর | ঢাকা সেনানিবাস, বাংলাদেশ |
নীতিবাক্য | জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য, জাতির জন্য দেখা ও শোনা |
ডিজিএফআই কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা তথ্য বাংলাদেশ সরকারকে ও সামরিক বাহিনীকে প্রদান করে। দেশের শাসক ও সামরিক কমান্ডারদের যেকোনো বিরোধী রাষ্ট্রের সামরিক আক্রমণের আগাম বার্তা জানানো এর প্রধান কাজ ।
- কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অপারেশন।
- বাংলাদেশ সরকার কে বই বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করা
- বাংলাদেশ সরকার কে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে এমন যেকোন বিষয় সম্পর্কে অবগত করা
- সাইবার ইন্টেলিজেন্স; অনলাইনে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল বিষয় তদারকি নজর রাখা
- সামরিক গোয়েন্দা বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা তৎপরতা সম্পর্কে অবগত করা
- আকাশ পথে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা
- নৌবাহিনীকে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করা
গোয়েন্দা সংস্থার বৈশ্বিক নীতি অনুযায়ী সার্বক্ষণিক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং বাংলাদেশের বাইরে বাংলাদেশ বিরোধী যে কোন চক্রান্ত ও কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে তাৎক্ষণিক গোপন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অপারেশন পরিচালনা করে থাকে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন বাহিনীর ভিতরে ব্যাংক পদমর্যাদা এবং সদস্যদের মানসিক রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা
ব্যর্থতা
2009 সালের 25 শে মার্চ বাংলাদেশের আধা সামরিক বাহিনী বিডিআর বিদ্রোহে 57 জন আর্মি অফিসার , বি ডি আর এর প্রধান এবং সকল ঊর্ধ্বতন কমান্ডারদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় পরিকল্পিত আঘাত।
অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সংশয়বাদীদের মতে বাংলাদেশ বাংলাদেশের সক্রিয় ভিনদেশী কোন এক গোয়েন্দা সংস্থা , বিডিআর জওয়ানদের ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে এই পিলখানা হত্যাকান্ডের নীলনকশা বাস্তবায়ন করে।ধারণা করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে দিতে এই পিলখানা হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মত একটি বৃহৎ মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে সুস্পষ্ট আগাম তথ্যের ঘাটতি ডিজিএফআইয়ের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও এর সার্বিক তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে। বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীকে যেকোনো ভিনদেশী চক্রান্ত থেকে বাঁচাতে ডিজিএফআইয়ের সার্বিক তথ্যপ্রযুক্তিগত ক্ষমতা ও কর্ম প্রক্রিয়ার প্রসার ও নীতি নির্ধারণ করা রাষ্ট্রের একান্ত প্রধান কর্তব্য ।
ডিজিএফআই এর সাফল্য
ডিজিএফআই বাংলাদেশের মূল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী এবং সংবিধানের রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান গোপনে বাংলাদেশের ও এর নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা কল্পে বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স অপারেশন পরিচালনা করে থাকে। কিছু সময় বাংলাদেশের বিধ্বংসী রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে এ কে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। নীতি-নৈতিকতা ও জাতির প্রতি গভীর দায়বদ্ধতার প্রতীকস্বরূপ ডিজিএফআই এর বিভিন্ন কর্মকান্ড সচেতন নাগরিক সমাজের কাছে কাছে একটি সম্মানীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে
ডিজিএফআই এর কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বাংলাদেশ ইসলামিক চরমপন্থী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিমাণে অভিযান পরিচালনা করেছে এবং এতে ধর্মীয় চরমপন্থীদের চেইন অফ কমান্ড কে ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ডিজিএফআই পার্বত্য চট্টগ্রামে ভিনদেশী গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা প্ররোচিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এর বিরুদ্ধে সক্রিয় ভাবে ইন্টেলিজেন্স মিশন পরিচালনা করে আসছে ।
ধারণা করা হয় দেওয়ান চান্দ মালিক নামে ডিজিএফআইয়ের এক এজেন্ট ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র তে প্রায় ছয় বছর চাকরি করে অনেক গোপন নথি নিয়ে 2005 সালে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে গেলেও ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে;
দেশ ও জাতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে যেকোনো সম্ভাব্য ঝুঁকি বা চক্রান্ত সম্পর্কে অবহিত করার দায়িত্ব পালন করে থাকে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত এই গোয়েন্দা সংস্থাটি। ডিজিএফআই আমেরিকান সিআইএ রাশিয়ার এফএসবির ও আরো বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংসদের সাথে সাথে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে থাকে ।