সিআইএ (CIA ) র মতে বাংলাদেশের স্বাধিনতার ঘোষক কে ?

মুক্তিযুদ্ধের পরের বাংলাদেশে জন্ম নেয়া সকল জেনারেশনের মনে আজে এক অমিমাংশিত দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে ।

কে দিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধিনতার ঘোষণা । এই স্বাধীনতার  ঘোষক কে এই নিয়ে রয়েছে বিস্তর ভিন্ন মতভেদ ও রাজনৈতিক  মতবাদ  ।

যে জাতি তার ইতিহাস জানে না , তার নেই কোন জাতিসত্বা । এই উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাঙালি জাতীর ইতিহাস পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে ১৭৫৭ র পলাশীর ময়দান থেকে । পরাধিনতার ২১৪ বৎসর পড় যখন বাঙালি ১৯৭১ এ পেল তার কাঙ্খিত স্বাধীনতা । সেই দেশ টা তখন আয়তনে অনেক ছোট । ১৯৪৭ এ  হাজার বৎসরের গর্বিত বাঙালিদের শেষ শাস্তি হিসাবে ব্রিটিশ চক্রান্তে বিভক্ত করা হোল নাম দেওয়া হোল পাকিস্তান ।

ব্রিটিশদের ভাগাভাগির পড় পাকিস্তানিরা এসে বদলে দিতে চাইল তার ভাষা ও জাতিসত্বা । যে পাকিস্তানের নামের সৃষ্টি হয়েছে কিছুদিন আগে – বাঙালি জাতীর ইতিহাস ও ঐশ্বর্যের কাছে ওরা ছিল নিতান্তই শিশু ।

এমনকি ১৯৭১ এর পরেও বিভিন্ন ভিনদেশী শত্রুরা ও দেশীয় মীরজাফর রা তাদের স্বার্থে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের গর্বিত ইতিহাস ।
বাঙালি জাতীর বিরুদ্ধে এখন চলছে তথ্যের যুদ্ধ ।

তাই চলুন আমাদের স্বাধিনতার ঘোষক কে তা খুজতে বাংলাদেশের ইতিহাসের বই  বাদ দিয়ে  ভিনদেশি   তথ্য উপাত্তে বাংলাদেশের স্বাধিনতার ঘোষক কে তা নিয়ে গবেষণা করা যাক ।


White House north and south sides.jpg

মার্কিন স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল গুরত্বপুরন  গোপনীয় রিপোর্ট সরাসরি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট এর কাছে প্রেরন করা হয়  ।  মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রেসিডেন্ট কে রিপোর্ট প্রদান করেন এবং এতে সি আই আ ও মার্কিন সেনাবাহিনীর এই রিপোর্ট তৈরি করে । তাদের বিভিন্ন মিটিং এর বিশয়বস্থু আমেরিকার আইন অনুজায়ি টপ সিক্রেট হিসাবে রক্ষিত থাকে লিখিত অবস্থায় ।

কিছুদিন আগে উইকিলিক্স এ সকল আমেরিকার গোপন নথি হ্যাক করা হলে পরবর্তীতে  অফিসিয়াল ভাবে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঐ  সকল ঐতিহাসিক নথি প্রকাশ করে ।উইকিলিক্স এ একে কিসিঞ্জার ক্যাবল বলা হয় ।

এইসকল গুরত্বপুরন নথিগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য অনেক গুরত্বপুরন । এতে আমরা পর্দার আড়ালে হয়েযাওয়া অনেক ঘটনার ব্যাখা পেতে পাড়ি ।  এই কিসিঞ্জার ক্যাবলের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার ভুমিকা  কিংবা  বিভিন্ন গুরত্বপুরন বিশ্লেষণ  পেতে পাড়ি যা ঐতিহাসিক ভাবে গুরত্বপুরন ।

বাংলাদেশের অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমেরিকা ছিল তখন সবচেয়ে বড় মিত্র শক্তি । আয়তনে বড় ভারতের সাথে ব্যাল্যান্স    বজায় রাখতে এর কোন বিকল্প ছিল না । তাই ১৯৭১ এর  স্নায়ুযুদ্ধের  তৎকালীন পাকিস্তান কিংবা বাঙালিরা  ছিল আমেরিকার কাছে অনেক গুরত্বপুরন ব্যাপার  ।

১৯৭১ সালে  মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচারড নিক্সন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রি  হেনারি কিসিঞ্জার ।

বামে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচারড নিক্সন ডানে   পররাষ্ট্র মন্ত্রি হেনারি কিসিঞ্জার

১৯৭১ সালের মার্চ ৬ 

আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টের   South Asia Crisis, 1971 এই শিরোনামে র সকল  তথ্য উপাত্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ও উইকিলিক্স এর কিসিঞ্জার কেবেলে পাওয়া যাবে  । ১৯৭১ সালের মার্চ ৬ এ হোয়াইট হাউজ সিচুয়েশন রুমে একটি হাই প্রোফাইল মিটিং হয় সেখানে  সি আই এ  এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট  Minutes of Senior Review Group Meeting Washington, March 6  থেকে কে কিছু লাইন  তুলে ধরা হোল .

 We are talking with the British this afternoon about the situation. Mujib has unparalleled political control, capturing 160 of the 162 seats up for grabs in the last election. And he is friendly toward the US. In West Pakistan, Bhutto is almost unparalleledly unfriendly to the US. While we have maintained a posture of hoping the country can be brought together and its unity preserved, the chances of doing so now are extremely slight. It is only a question of time and circumstances as to how they will split, and to what degree the split is complete or may be papered over in some vague confederal scheme

U. Alexis Johnson – US state department

আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে আজ বিকেলে ব্রিটিশ সঙ্গে কথা বলা হবে। মুজিব 162 আসন 160  গত নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন , অনুপম রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আছে। তিনি মার্কিন দিকে বন্ধুত্বপূর্ণ। পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টো প্রায়  মার্কিনদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ নয় । আমরা হয়ত এই দুই দেশকে এক সাথে রাখতে তাদের সাথে সমঝোতার ব্যাবস্থা করতে পাড়ি , কিন্তু টা হবার সম্ভবনা খুবই কম । এখন শুধু প্রশ্ন তারা কিভাবে বিভক্ত হবে এবং টা কত বড় আকারে । এমনকি কিব বিচিত্র কোফেডারেশন ও হতে পাড়ে ।

U. Alexis Johnson – US state department

৬ মার্চের মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর বাসভবন হোয়াইট হাঊসে হয়ে যাওয়া এই টপ সিক্রেট মিটিং এ পাকিস্তানের তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়  । রাজনৈতিক অবস্থা  বিশ্লেষণ করে মার্কিন গোয়েন্দাদের নিশ্চিত হন পাকিস্তান ভাগ হবেই , কিন্তু কিভাবে ভাগ হবে বা এর কোন রাজনৈতিক সমঝোতা আমেরিকা করতে পাড়ে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয় ।  অবাক হলেও সত্যি সাত মার্চের শেখ মুজিবুর এর ভাষণের বিষয়বস্তু কি হবে তা নিয়ে আমেরিকানরা অনেকটাই সিউর ছিলেন ।

অর্থাৎ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তখনই ধারনা করে ৭ মার্চ ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিনতার ঘোষণা দিতে পাড়ে ।  এবং এই সাত মার্চের ঘোষণা আসলে ইয়াহিয়া কি ব্যাবস্থা নিতে পাড়ে তার ব্যাখ্যা করা হয় এই মিটিং এ ।


 “”

If Mujib should come to us and tell us he plans to make a unilateral declaration of independence and ask what our attitude would be, we would then face the issue of what to say. If Yahya carries out his declaration on the use of force against East Pakistan, we would have to decide what attitude to adopt. The judgement of all of us is that with the number of troops available to Yahya (a total of 20,000, with 12,000 combat troops) and a hostile East Pakistan population of 75 million

যদি মুজিব আমাদের কাছে আসে এবং একটি সম্পুরন স্বাধিনতার ঘোষণার কথা বলে এবং আমাদের মতামত জানতে চায় তখন আমরা (আমেরিকা )  তাকে কি বলব সেটা অনেক বড় ব্যাপার । আর ইয়াহিয়া যদি তার মতে থেকে এই স্বাধিনতা ঘোষণার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করে তখন আমরা ( আমেরিকা ) কি করবে তাও চিন্তা করতে হবে । এখন ইয়াহিয়ার ২০০০০ হাজার কমব্যাট ট্রুপ্স রেডি আছে এবং তার বিপক্ষে রিয়েছে   পূর্ব পাকিস্তানের ৭৫ মিলিয়ন জনতা ।   “” 


অনেকটা অবাক করা বিষয় হলেও দেখা যাচ্ছে ২৬ শে মার্চের আগেই ৬ মার্চেই মার্কিন গোয়েন্দা  সংস্থারা বাংলাদেশের সম্ভাব্য পাকিস্স্বাতান থেকে স্বাধীনতা  ঘোষণা  আসতে পাড়ে   ৭ মার্চে  তা  নিয়ে কনফার্ম ছিলেন । কিন্তু তার পোরেও কে সম্পুরন ভাবে বাংলাদেশের স্বাধিনতা র ঘোষণা দিয়েছিলেন ত এখন পরিস্কার নয় ।

১৩ মার্চ ১৯৭১ – হোয়াইট হাউজ 

৬ মার্চের এই মিটিং এর পড় ১৩ই মার্চ  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনারি কিসিঞ্জার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচারড নিক্সন কে পূর্ব পাকিস্তান ( বাংলাদেশের) ব্যাপারে রিপোর্ট প্রদান করেন   Memorandum From the Presidentʼs Assistant for National Security Affairs (Kissinger) to President Nixon1  তাতে লেখা হয়


While East Pakistani leader Mujibur Rahman has stepped back a bit from a declaration of independence, the full text of his March 7 speech conveys a harsher tone than the initial summary reports, and it seems apparent that his retreat was tactical. He made clear that something very close to independence “

 

” দেখা যাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা   শেখ মুজিবুর রহমান তার পূর্ব  পরিকল্পিত স্বাধিনতার ঘোষণার থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছেন । মার্চের ভাষণের পূর্ণ কপি তে দেখা যায় অনেক কঠিন কথা বলেছেন তিন , এবং এটা মনে হচ্ছে তার এই পিছিয়ে পড়া তার  একটি স্ট্রেটেজিক কৌশল হতে পাড়ে । উনি ব্যাপারটা পরিস্কার করেছেন তারা স্বাধিনতার খুব কাছা কাছি “


১৩ মার্চের মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রি এবং প্রেসিডেন্ট এর মিটিং এর প্রধান বিশয়বস্তু ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ৭ মার্চের  ভাষণ ।  এই হাই প্রোফাইল সিক্রেট মিটিং এ তৎকালীন সময়ের গুরত্বপুরন রাজনৈতিক পালা পরিবর্তনের ব্যাপার গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে । ৬ মার্চে দেওয়া ভূট্টোর  দেওয়া ভাষণে  স্বাধিনতার বিপক্ষে অনেক কঠিন ব্যাবাস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিলে হয়ত শেখ মুজিব সম্পুরন স্বাধিনতার ঘোষণা থেকে পিছিয়ে আসেন বলে মোমেরান্ডাম এ বলা হয় ।

Our embassy in Islamabad believes that Rahmanʼs goal remains unchanged—“emancipation” of East Pakistan from West Pakistani domination. This could still conceivably mean “full provincial autonomy” within a united Pakistan. But it is just as likely, if not more so, that Rahman has come to believe firmly that the freedom he seeks is only attainable by outright independence. His speech last Sunday would suggest an effort to achieve his goal by gradual assertion of power without risking a direct confrontation with the army that might follow a unilateral declaration of independence.

 

” আমাদের ইসলামাবাদ এমব্যাসি বিশ্বাস করে রহমানের উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত  পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিম পাকিস্তানি প্রভাব থেকে রাজনৈতিক স্বধিনতা চান ।  এটা এখন মনে হচ্ছে এক পাকিস্তান থেকেও পূর্ব পাকিস্তানের সায়ত্বস্বাসন সম্ভব । কিন্তু তা হবার সম্ভবনা খুবই কম  , যদি তা না হয় রহমান বিশ্বাস করেন যে রাজনৈতিক স্বাধিনতা তিনি চাইছেন তা কেবল পূর্ণ স্বাধীনতার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পাড়ে । গত রবিবারের ভাষণে এটাই স্পষ্ট যে উনি সামরিক বাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে   ধিরে দিরে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাইছেন যা হয়ত  আনফিসিয়াল স্বাধীনতার ঘোষণা হতে পাড়ে “

সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে সামনে সম্ভাব্য কি হতে পাড়ে তার একটি অনুমান দেবার চেষ্টা করে । এতে বলা হয়


Yahya could decide not to take Rahmanʼs challenge lying down and to retaliate, perhaps to the extent of arresting Rahman and the other leaders, and attempting to clamp a military lid on East Pakistan. There are two basic problems here: (1) Rahman has embarked on a Gandhian-type non-violent non-cooperation campaign which makes it harder to justify repression; and (2) the West Pakistanis lack the military capacity to put down a full scale revolt over a long period

 

ইহাহিয়া এখানে রহমানের চ্যালেঞ্জ  থামিয়ে দিতে পাড়বেন না আবার সামরিক আক্রমন ও করতে পাড়বেন না , হয়ত রহমান এবং আরো নেতাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে একটি সামরিক অবসথায় নিয়ে যেতে পাড়ে পূর্ব পাকিস্তানকে । এখানে দুইটি প্রধান  সমস্যা রয়েছে (১)  রহমান সহিংসতার পথে না গিয়ে  গান্ধিয়ান অসহযোগ আন্দোলনের পথ ধরেছেন যা  মিলিটারি শোষণকে মুল্যায়ন করে না । (২) পূর্ব পাকিস্তানের এমন কোন মিলিটারি শক্তি নেই যে তারা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একটি পূর্ণ বিল্পব দমিয়ে রাখতে পারবে । 


মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে দেওয়া এই রিপোর্টে কিসিঞ্জার উল্লেখ করেন আমেরিকা যে পক্ষেই থাকুক ভিন্ন পক্ষের সাথে তাদের সম্পর্ক খারাপ হবে ।  তবু ও  তারা ইহাহিয়াকে সমর্থন করার প্রয়াস ব্যাক্ত করে ।  এতে বলা হয় যদি পূর্ব পাকিস্তান স্বাধিন হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশ ( পূর্ব পাকিস্তান )  তাদের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ হবে  , তাই তারা দুই পাকিস্তানকে এক রাখতে তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলে ।  নিক্সনের এর ইহাহিয়া এবং পশ্চিম পাকিস্তান প্রিতি তাকে ইতিহাসে সমালোচিত করেছে কঠিন ভাবে ।

২৬ মার্চ ১৯৭১ , ওয়াশিংটন  ( স্পেশাল একশন  গ্রূপ মিটিং)

১৩ মার্চের এই প্রতিবেদনের পড়  ২৬ শে মার্চ থেকে প্রতিনিয়ত একদিন দুইদিন পড় পরই হোয়াইট হাউজে রিপোর্ট এবং মিটিং হতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের বিষয় নিয়ে  । মার্চের ২৯ তারিখে প্রেসিডেন্ট রিচারড নিক্সনের সাথে কিসিঞ্জারের আলাপে নিক্সনের ইয়াহিয়ার প্রতি সমর্থন এর কথা প্রকাশ্যে উঠে আসে । ২৬ মার্চের ইমারজেন্সি মিটিং এ বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিনতা ঘোষণা করা হয়েছে ।


 ২৬ মার্চ  ওয়াশিংটনে স্পেশাল একশন  গ্রূপ মিটিং এ উপস্থিত চিলেন হেনারি  কিসিঞ্জার  , স্টেট ডিপার্টমেন্ট , ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি ও সি আই এর প্রতিনিধিবিন্দ । যারা ২৫ ও ২৬ মার্চ ঘোটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইমারজেন্সি মিটিং করছিলেন । সেখানে সি আই এর মিস্টার রিচারড হেলমস  বলেন

 

 ” An agreement appeared near on March 24. The breakdown may have been because of Mujibur Rahmanʼs insistence on the immediate lifting of martial law.

A clandestine radio broadcast has Mujibur Rahman declaring the independence of Bangla Desh. There are 20,000 loyal West Pakistani troops in East Pakistan. There are also 5,000 East Pakistani regulars and 13,000 East Pakistani paramilitary troops, but their loyalty is doubtful.

” মার্চের ২৪ তারিখের আলোচনায় একটি সমোঝোতা আসলেও  সেই চুক্তি  ভেঙ্গে যায় কারন মুজিবুর রহমান সম্পুরন সামরিক শাসন প্রত্যাহার চাইছিলেন ।

একটি  ক্ষিন ও গোপনীয় রেডিও  ব্রডকাস্টে  শেখ মুজিবুর রহামান বাংলাদেশের স্বাধিনতা ঘোষণা করেন ।  সেখানে প্রায় ২০০০০ হাজার পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য রয়েছে  । বিপক্ষে রয়েছে ৫০০০ পূর্ব পাকিস্তানি সৈন্য ও ১৩০০০ আধা সামরিক বাহিনী  কিন্তু তারা কোন পক্ষে থাকবে তা নিশ্চিত নয় ।


সুতরাং আমাদের হাজারো সন্দেহ আর রাজনৈতিক বাক্যালাপের অবকাশ রইল না  । শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির বহু প্রতিক্ষিত স্বাধীনতার ঘোষণা ২৬ মার্চ রাত ১২ টার দিকে দেন , যা মুলত গ্রহন করে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস( ইস্ট বেঙ্গল রাইফেলস )  , বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী  , ঢাকায় আমেরিকার এমব্যাসি   ।  পাকিস্তান বাহিনী মুলত শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পাড়েন তা  জেনেই ২৫শে মার্চে ঢাকায় গনহত্যা শুরু করে  ।  তারা  প্রতিরোধ এর মুখে পড়ে রাজারবাগ ও পিলখানায় । তখন বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজার বাঙালি সামরিক যোদ্ধারাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা ।

মেজর জিয়াউর রহমান এর ভূমিকা 

বাংলাদেশের স্বাধিনতা ঘোষণা দিতে পাড়েন শেখ মুজিব তা সারা মার্চেই  বাংলায় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে আলোচিত হয় । জনমানুষের নেতা  শেখ মুজিব ২৬শে মার্চ সর্বশেষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে ও ২৫শে মার্চের ঢাকায় গনহত্যার প্রতিবাদ সরূপ  পাকিস্তান বাহিনিতে থাকা বাঙ্গালিরা সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়াগায় সাথে সাথে  বিদ্রোহ করে । সিলেট ক্যন্টন্মেন্ট ও   কর্নেল ওসমানী বাঙালি যোদ্ধাদের সংগঠিত করেন এবং ক্যান্টনমেন্ট থেকে যুদ্ধ করে সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে আশ্রয় নেন  । কুমিল্লা ও চিটাগং সেনানিবাসে সকাল বেলাই মেজর জিয়াউর রহমান ও তার অধীনে সৈনিকেরা  বীরের মত কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করেন এবং  বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণার কথা সমগ্র দেশে প্রচার করেন । শেখ মুজিবুর রহমান   ধান্মন্ডির বাড়ি থেকে ঘোষণা কেবল সামরিক ও  গোপনীয় মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলেও মেজর জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে  তা বাংলাদেশের সকল স্থানে পৌঁছে দেন ।

মেজর জিয়াউর রহমান তার জীবিত অবস্থায় কখন দাবি করেন নি তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন । পরবর্তীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার উদ্দেশে  ইতিহাস পরিবর্তনের চেষ্টা করে ঘোষণা করার চেষ্টা করা হয় , স্বাধীনতার ঘোষক   মেজর জিয়াউর রহমান । এতে এই মহান বীর সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কেই  অপমান করা হয়েছে ।  

মেজর জিয়াউর রহমান একজন বীর বাঙালি যোদ্ধা হিসাবে এই বাংলার ইতিহাসে রয়ে যাবেন । জিনি নিজের জীবন বাজী রেখে শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন ।


আসলে এই বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল বাঙালি জাতি , তার প্রতিনিধিত্ব করতেন এক গর্বিত বাঙালি  শেখ মুজিবুর রহমান যে দায়িত্ব নিজ  জীবন  দিয়ে পালন করে গেছেন ।  আমরা সেই গর্বিত বাঙালি সভ্যতার  বংশধর । যারা  হাজার বৎসর ধরে লড়ে গেছে সত্যের পক্ষে ন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার রক্ষায়  ।

তাই চলুন সেই বাঙালি জাতীকে নিয়েই বাঙালির বিরোধী   আমেরিকান্করা  বলেছিল তা শুনতে ফিরে যাই  ২৯ মার্চ এর ম্রকিন প্রেসিডেন্ট ও কিসিঞ্জার এর ফোন আলাপে

Transcript of Telephone Conversation Between President Nixon and His Assistant for National Security Affairs (Kissinger)1

 

President Nixon :   Where revolution in itself, independence is a virtue which of course it never was. That wasnʼt true at the time of the French revolution either and it isnʼt any more true today. The real question is whether anybody can run the god-damn place.

Kissinger : Thatʼs right and of course the Bengalis have been extremely difficult to govern throughout their history.

President Nixon : The Indians canʼt govern them either.

Kissinger : No, well actually the Indians who one normally would expect to favor a breakup of Pakistan arenʼt so eager for this one. Because theyʼre afraid that East Pakistan may in time, or East Bengal may in time have an attraction for West Bengal with Calcutta and also that the Chinese will gain a lot of influence there.

President Nixon: Interesting.

Kissinger: And that, I think, is a good chance

প্রেসিডেন্ট নিক্সন ঃ  যেখানে বিপ্লব ও স্বাধিনতা একটি মুল্যবোধ তা কখনই সত্যি ছিল না ।  যেমন তা সত্য ছিল না ফরাসি বিপ্লবের সময় , এখন কোন বিপ্লব সত্য নয় । সত্যিকারের ব্যাপারটা হল কেউ কি বিধাতার এই ধরাদর চলাতে পাড়ে কি না

হেনারি কিসিঞ্জার ঃ  হ্যা এটা সত্য তবে ঐতিহাসিকভাবে বাঙ্গালীদের কেউ বেশিদিন শাসন করতে পাড়ে নাই ।

নিক্সন ঃ ঈন্ডিয়ান রাও কি তাদের শাসন করতে পাড়ে না ? 

কিসিঞ্জার ঃ না      – তবে মনে হবে ঈন্ডিয়ান রা হয়ত পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাবে এমন কিছু চায় । কিন্তু আসলে তা নয় । কারন তারা নিজেরাই ভয়ে আছে  পূর্ব পাকিস্তান  কোন এক সময় কিংবা পূর্ব বাংলা ( স্বাধিন  বাংলাদেশ ) কোন এক সময়  হয়ত  পশ্চিম বাংলার কলকাতার  দিকে  নজর দিতে পাড়ে , যেখানে চায়নার  আধিপত্য থাকবে বলে তারা মনে করে ।

নিক্সন ঃ ইন্টারেস্টিং !

কিসিঞ্জার ঃ এবং আমরা  মনে করি এটা একটি ভাল সুযোগ

১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও তার পররাষ্ট্র মুন্ত্রির সাথে এই টেলিফোন আলাপের মাধ্যমে  এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে বাঙ্গালীদের  বিশ্ববাসী কিভাবে দেখে। এবং বাঙ্গালীদের এই মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে  যে ভারতের ভহুমিকা খুবই অল্প তা এখানেই  স্পষ্ট হয়ে উঠে । কিসিঞ্জার আগে থেকেই বুঝেছিলেন বাঙ্গালীদের দমিয়ে রাখা কঠিন হবে । এবং ভারত যে এই স্বাধিন বাংলাদেশের বিরোধী ছিল তা এখানেই স্পষ্ট । কারন তার ভয় পেয়েছিল যদি বাঙালি জাতীয়তাবাদ এই দক্ষিন এশিয়ায় মাথা তুলে দাড়ায় তাহলে ভারতের অধিনস্ত বাঙ্গালিরাও বাংলাদেশের সাথে কোন একদিন ভবিষ্যতে যোগদান করতে পাড়ে ।

যদিও এখন  তা দেখার বাকি শত বৎসরের  বাঙালি জাতিওতাবোধ যদি সমগ্র বাংলাকে একত্রিত করে তবে এই বাংলাই হবে দক্ষিন এশিয়ার এক অন্যতম সুপার পাওয়ার ।


যারা এই নিবন্ধে উল্লেখিত আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের ও সি আই এর রেফারেন্স নিয়ে সন্ধিহান তারা দয়াকরে

Foreign Relations of the United States, 1969–1976, Volume XI, South Asia Crisis, 1971

এই লিঙ্কে গিয়ে নিজেরা পড়ে দেখতে পাড়েন এবং যাচাই করে দেখতে পাড়েন তথ্যের উৎস ।


আজিজ তারেক

সম্পাদক

বিডিনিউজনেট ডট কম