খ্রিষ্টান প্রধানমন্ত্রী “জাসিন্ডা আরডের্ন ” এর ভালবাসায় কৃতজ্ঞ নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা ও পুরো মুসলিম উম্মাহ

সেদিন নিউজিল্যান্ডের এক মসজিদে এক মানুষরূপী নরপিশাচ হামলা চালিয়েছিল শান্তির ধর্ম ইসলামকে নিউজিল্যান্ড থেকে সরিয়ে দেবার দেবার জন্য । আধুনিক সময়ের ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু ইসলামিক স্টেট এর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার বদলা সরুপ এই নরপিসাচ মসজিদে হামলা চালায় বলে ৮৬ পাতার এক নীলনকশা প্রকাশ করে সহানুভতি আদায়ের জন্য ।

কিন্তু সেই নরপিসাচের ডাকে সারা দেয়নি নিউজিল্যান্ডের খ্রিস্টান সমাজ ও এর প্রধানমন্ত্রী । নিজে মাথায় স্কার্ফ / হিজাব পড়ে এবং এখন থেকে প্রতি শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের সরকারি টেলিভিশনে আজান সম্প্রচার করার উদ্যেগ নিয়েছেন , এবং নিজের ভাষণে সেই হত্যাকারির নাম পর্যন্ত উল্ল্যেখ করেন নি । এই হত্যাকান্ডের সকল শহীদ পরিবারকে নিউজিল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সাহাজ্য দেবার কথা দিয়েছেন ।হামলার পর দিন মিজ আরডের্নকে হতাহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়া যে ছবি দেখা গেছে তাতে রাজনৈতিক সমসাময়িক নেতাদের আচরণের সাথে বৈপরীত্য তুলে ধরে

জাসিন্দা আরডের্ন ক্রাইস্টচার্চে হতাহতদের পরিবারের মাঝে

জাসিন্দা আরডের্ন ক্রাইস্টচার্চে হতাহতদের পরিবারের মাঝে।
BBC

এই হামলার পর অনেক মুসলিম নারি হিজাব পড়তে ভয় পাচ্ছেন বলে জানালে , নিউজিল্যান্ড এর অনেক খ্রিষ্টান মেয়েরা এখন থেকে মাথায় হিজাব পরবেন বলে জানিয়েছেন । মসজিদে এই হত্যাকান্ডের পর নিউজিল্যান্ড ও সারা বিশ্বের খ্রিষ্টান ও ইহুদি সমাজ এর তিব্র নিন্দা প্রকাশ করে । তারা বলেন ইসলাম ধর্মের উপর এই হামলা তাদের ধর্মের উপরো হামলা হবার সমান । এর আগে গত বৎসর ২০১৮ সালে আমেরিকায় এক ধর্মবিদ্বেষী সন্ত্রাসী এক ইহুদি গির্জায় হামলায় চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে ।

হামলার পর গত সপ্তাহে বক্তব্য দিচ্ছেন মিজ আরডের্ন

যখন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর বিবৃতি প্রদানের জন্য হাজির হলেন, তখন শুধু নিউজিল্যান্ডই তার বক্তব্য শুনতে উদগ্রীব ছিল তেমন নয়। সারা বিশ্বের মনোযোগ ছিল সেদিকে । স্পষ্টভাবে এই বন্দুক হামলাকে তিনি “সন্ত্রাসী হামলা” বলে বর্ণনা করেন।

ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে সুজানে মুর লিখেছেন “মার্টিন লুথার কিং বলেছেন সত্যিকারের নেতারা ঐক্য খোঁজে না তারাই ঐক্য তৈরি করে, আরডের্ন ভিন্ন ধরনের ঐক্য তৈরি, কর্ম, অভিভাবকত্ব ও একতার প্রদর্শন করেছেন।পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মোহাম্মদ ফয়সাল বলেছেন, মিজ আরডের্ন পাকিস্তানিদের ‘হৃদয় জয়’ করেছেন।

” সন্ত্রাসী হামলা বলে স্বীকার ”

সাধারনত পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম দের উপর হওয়া কোন হামলা কে সন্ত্রাসী হামলা না বলে – একে একটি সাধারন বন্ধুকধারি হামলা হিসাবে উল্লেখ করে । পশ্চিমা দেশের মধ্যে ও এর নেতাদের মধ্যে কেবল এই নিউজিল্যান্ড একে সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করেছে ।

শ্বেতাঙ্গ কোনও ব্যক্তির দ্বারা এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে অনীহা বা অনিচ্ছুক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে থাকেন । কিন্তু মিজ আরডের্ন এর দ্বারা দ্রুত, স্পষ্টভাষায় এই ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে সে বিষয়ে তার সচেতনতা এবং বিবেচনার বিষয়টি উঠে আসে।

” সংসদে আসসালামু আলাইকুম “

হত্যাকান্ডের শিকার স্বজনদের জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন। সেসময় মাথায় কালো রং এর স্কার্ফ পরেন তিনি যা তাদের প্রতি শ্রদ্ধারই বহিঃপ্রকাশ । এর কয়দিন পর পার্লামেন্টে বক্ত্যব্য রাখার সময় তিনি সবাইকে ” আসসালামু আলাইকুম ” বলে সম্বোধন করেন ।

অস্ত্র আইনে সংশোধন

মসজিদে এই হত্যাকান্ডের পরেই নিউজিল্যান্ড এর সংসদ তাদের অস্ত্র আইনে ব্যাপক পরিবর্তনের ঘোষণা দেয় । এতে মিলিটারি দ্বারা ব্যাবহার করা যায় এমন অটোম্যাটিক অস্ত্র নিউজিল্যান্ডে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ।

নিউজিল্যান্ডে নারীদের মাথায় স্কার্ফ

নিউজিল্যান্ডের মুসলমান নারীদের প্রতি সমর্থন জানাতে আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশ জুড়ে নারীরা একদিনের জন্য মাথা ঢেকে রাখবেন ।
শুধু এর মাধ্যমে কিউইরা নিউজিল্যান্ডের মুসলমান নারীদের প্রতি তাদের সহমর্মিতা প্রকাশ করবেন বলে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড সংবাদপত্র খবর দিয়েছে।

কৃতজ্ঞ নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা ও পুরো মুসলিম উম্মাহ

এই হত্যাকান্ডের পর নিউজিল্যান্ড বাসি ও তাদের প্রধানমন্ত্রী জেভাবে মুসলিম দের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা নজিরবিহীন । পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমানদের প্রতি যে সহিংস আচরন দেখা যায় তার সম্পূর্ণ বিপরীত আচরন এর প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন এর প্রতি কৃতজ্ঞ রইবে মুসলিম বিশ্ব ।