তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি এবং আমাদের বাংলাদেশ :প্রথম অধ্যায়

মাইক্রোপ্রসেসরের আবির্ভাবের পর বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সেটি ব্যবহার করে পার্সোনাল কম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু হয়। স্টিভ জবস (Steve Jobs) (১৯৫৫-২০১১) ও তার দুই বন্ধু স্টিভ জজনিয়াক (Steve Wozaniak) ও রোনাল্ড ওয়েনে (Ronald Wayne) ১৯৭৬ সালের ১লা এপ্রিল অ্যাপল কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। অ্যাপলের হাতেই পার্সোনাল কম্পিউটাব্রের নানান পর্যায় বিকশিত হয়েছে।

IBM logo.svg

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস কর্পোরেশন


অন্যদিকে ১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি তাদের বানানাে পার্সোনাল কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার জন্য উইলিয়াম হেনরি বিল গেটস (Willian Henry Gates) (ঞ্জন অক্টোবর ২৮, ১৯৫৫) ও তাঁর বন্ধুদের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটকে দায়িত্ব দেয়। বিকশিত হয় এমএল ছল এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ কম্পিউটার পরিচালিত হয় বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোসফট কোম্পানির অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার দিয়ে।

উইলিয়াম হেনরি বিল গেটস
ইন্টারনেটের বিকাশকালে ১৯৮৯ সালে একজন ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল (ht) ব্যবহার করে তথ্য ব্যবস্থাপনার
তাৰ করেন এবং তা বায়ন করেন। সেই থেকে সার টিমােথি জন ‘টিম বার্নার্স-লি (Tim Beners Lee) (জন্ম জুন-৮, ১৯৫৫)ওয়ার্ড গুয়াইড ওয়েবেল্প (www) জনক হিসেবে পরিচিত। নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিকাশের ফলে বিশ্বের নানান দেশের মধ্যে ইন্টারনেট বিস্কৃত হয়। ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিকশিত হয় বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।
সন্স টিমােধি গ্রন টিম’ মার্কাস-লি।


বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের নাম ফেসবুক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zukerbert} (জন্ম মে ১৪, ১৯৮৪) ও তাঁর চার বখর হাতে সুচিত হয় ফেসবুকের। শুরুতে এটি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবদ্ধ থাকলেও মার্চ ২০১৫-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ১৪১৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারী ফেসবুক ব্যবহার করেন। এ সংখ্যা প্রভিদিনই বাড়ছে। আমাদের বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে এখন

ই-লার্নিং ও বাংলাদেশ

পৃথিবীতে জ্ঞান অর্জনের একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি দীর্ঘদিন থেকে মােটামুটি একইভাবে কাজ করে আসছিল। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার পর প্রথমবার সেই পদ্ধতির এক ধরনের পরিবর্তন হতে শুরু করেছে এবং ই-লার্নিং নামে নতুন কিছু শব্দের সাথে আমরা পরিচিত হতে শুরু করেছি। ই-লার্নিং শব্দটি ইলেকট্রনিক লার্নিং কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ এবং এটা বলতে আমরা পাঠদান করার জন্যে সিডি রম, ইন্টারনেট, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক কিংবা টেলিভিশন চ্যানেল ব্যবহার করার পদ্ধতিকে বুঝিয়ে থাকি। মনে রাখতে হবে ই-লার্নিং কিন্তু মােটেও সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানের বিকল্প নয়, এটি সনাতন পদ্ধতির পরিপূরক। উদাহরণ দেওয়ার জন্যে বলা যায়, শ্রেণিকক্ষে বিজ্ঞানের একটা বিষয় পড়ানাের সময় অনেক কিছুই হয়তাে হাতে-কলমে দেখানাে সম্ভব নয়। যেমন- সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ ইত্যাদি। শ্রেণিকক্ষে পাঠ দিতে দিতে শিক্ষক ইচ্ছে করলেই মাল্টিমিডিয়ার সাহায্য নিয়ে আরও সুন্দরভাবে বিষয়টির দৃশ্যমান উপস্থাপন করতে পারেন। সেটি এমনকি Interactive-ও হতে পারে। আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের জনগােষ্ঠী বিশাল। সে কারণে স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যাও বিশাল। নানা ধরনের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে আমাদের স্কুলগুলােতে দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। লেখাপড়ার জন্যে প্রয়ােজনীয় শিক্ষা উপকরণ বলতে গেলে নেই। ল্যাবরেটরি অপ্রতুল, ফলে হাতে-কলমে বিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্ট করার সুযােগ খুব কম। এই সমস্যাগুলাে সমাধানের জন্যে ই-লার্নিং অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। দক্ষ একজন শিক্ষকের পাঠদান ভিডিও করে নিয়ে সেটি অসংখ্য স্কুলে বিতরণ করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে বােঝানাের জন্যে অনেক ধরনের সহায়ক প্রক্রিয়া ছাত্রছাত্রীদের দেয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষক চাইলে নিজেই তার পাঠদানে সহায়তা করার জন্যে প্রয়ােজনীয় বিষয় তৈরি করতে পারেন এবং সেটি বারবার ব্যবহার করতে পারেন। সারা পৃথিবীতেই ই-লার্নিংয়ের জন্যে নানা উপকরণ তৈরি হতে শুরু করেছে। পৃথিবীর বড় বড় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য কোর্স অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং যে কেউ সেই কোর্সটি গ্রহণ করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে এবং অনেক সময়েই একজন সেই কোর্সটি নেয়ার পর তার হােমওয়ার্ক

জমা দিয়ে কিংবা অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে সেই কোর্সটির প্রয়ােজনীয় ক্রেডিট পর্যন্ত অর্জন করতে পারছে। আমাদের বাংলাদেশও এতে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বাংলায় কোর্স দেবার জন্যে বেশ কিছু ওয়েবসাইট পাের্টাল তৈরি করেছেন এবং সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ বাংলা ভাষায় সেই কোর্সগুলাে গ্রহণ করতে পারবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ করে কম্পিউটার প্রােগ্রামিংয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার উপযােগী এই ধরনের সাইটগুলাে দেশে-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে উত্তম পাঠদানের সীমাবদ্ধতা দূর করার ব্যাপারে ই-লার্নিং অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারলেও আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এটি কিন্তু কোনােভাবেই প্রচলিত পাঠদানের বিকল্প নয়। প্রচলিত পাঠদানের সময় একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সরাসরি দেখতে পারেন, তাদের সাথে কথা বলতে পারেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সাথে নানাভাবে ভাব বিনিময় করতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে। শুধু তাই নয়, তারা পাশাপাশি একে অন্যকে সাহায্য করতে পারে, একে অন্যের সহযােগী হয়ে শিখতে পারে। ই-লার্নিংয়ের বেলায়

এই বিষয়গুলাে প্রায় সময়ই অনুপস্থিত থাকে, পুরাে প্রক্রিয়ায় মানবিক অংশটুকু না থাকায় পদ্ধতিটা যান্ত্রিক বলে মনে হতে পারে। সে কারণে ই-লার্নিংকে সফল করতে হলে শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি উদ্যোগী হতে হয়। আমাদের বাংলাদেশে ই-লার্নিংয়ের অনেক বড় সুযােগ আছে, কারণ অনেক বড় বড় সীমাবদ্ধতা আসলে ই লার্নিং ব্যবহার করে সমাধান করে ফেলা সম্ভব। তবে প্রচলিত ই-লার্নিংয়ের জন্যে ইন্টারনেটের স্পিড, প্রয়ােজনীয় অবকাঠামাে এবং ই-লার্নিংয়ের শিখনসামগ্রী (Materials) তৈরি করার প্রয়ােজন রয়েছে।

দলগত কাজ শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ই-লার্নিং কী ভূমিকা রাখতে পারে দলে আলােচনা করে উপস্থাপন কর।

ই-গভর্ন্যান্স ও বাংলাদেশ

গুড গভর্ন্যান্স বা সুশাসনের জন্য দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা। ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রচলনের ফলে সরকারি ব্যবস্থাসমূহকে আধুনিক ও যুগােপযােগী করার পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ব। এর ফলে নাগরিকের হয়রানি ও বিড়ম্বনার অবসান ঘটে এবং দেশে সুশাসনের পথ নিষ্কণ্টক হয়। শাসন ব্যবস্থায় ও প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়ােগই হচ্ছে ই-গভর্ন্যান্স। একটা সময় ছিল যখন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করা ছিল পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য এক বিড়ম্বনার ব্যাপার। বিশেষ করে প্রধান প্রধান শহর থেকে দূরবর্তী গ্রামে অবস্থানরতদের পক্ষে এটি ছিল দুষ্কর। মাত্র দুই-দশক আগেও এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সাত দিন পরেও অনেকেই তাদের ফলাফল জানতে পারত না। কিন্তু বর্তমানে ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট এবং মােবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানা যায়। ফলে, ফলাফল জানার যে বিড়ম্বনা ছিল সেটির অবসান হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ই-গভর্ন্যান্সের আর একটি উদাহরণ হলাে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য মােবাইল ফোনে। আবেদন করার সুবিধা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পূর্বে যশাের জেলায় একজন শিক্ষার্থী সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক হলে তাকে অনেকগুলাে কাজ সম্পন্ন করতে হতাে। এজন্য নিজে অথবা প্রতিনিধিকে সিলেট গিয়ে একবার ভর্তির আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং পরে আবার আবেদনপত্র জমা দিতে হতাে। বর্তমানে মােবাইল ফোনেই এই আবেদন করা যায়। ফলে, ভর্তিচ্ছুদের ভর্তির আবেদন ফরম জোগাড় ও জমা দেওয়ায় জন্য শহর থেকে শহরে ঘুরতে হয় না। আবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সকল সেবা স্বল্প সময়ে, কম খরচে এবং ঝামেলাহীনভাবে পাওয়ার জন্য চালু হয়েছে জেলা ই-সেবা কেন্দ্র। এর ফলে আগে যেখানে কানাে সেবা পেতে ২/৩ সপ্তাহ লাগতাে, সেটি এখন মাত্র ২-৫ দিনে পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তথ্যের ডিজিটালকরণের ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ৮০-৯০ শতাংশ সময় কম লাগছে। সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন দলিল, পর্চা প্রভৃতির নকল প্রদানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সক্ষমতাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগরিক যন্ত্রণার আর একটি উদাহরণ হলাে পরিসেবাসমূহের বিল পরিশােধ। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির বিল পরিশােধের গতানুগতিক পদ্ধতি খুবই সময়সাপেক্ষ এবং যন্ত্রণাদায়ক, কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ কর্মময় দিন বিদ্যুৎ বিল পরিশােধেই নাগরিককে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে মােবাইল ফোন কিংবা অনলাইনে এই বিল পরিশােধ
করা যায়। কেবল বিদ্যুৎ নয়, পানি ও গ্যাসের বিলও এখন অনলাইনে ও মােবাইল ফোনে পরিশােধ করা যায়। 3 গভর্ন্যান্সের মূল বিষয় হলাে নাগরিকের জীবনমান উন্নত করা এবং হয়রানিমুক্ত রাখা। ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে

কোনাে কোনাে কার্যক্রম ৩৬৫ দিনের ২৪ ঘণ্টা করা সমত্ব যেমন- ATM সেবা, Mobile ব্যাংকিং, তথ্য সেবা ইত্যাদি। ফলে, নাগরিকরা নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে সেবা গ্রহণ করতে পারে।
অন্যদিকে ই-গভর্ন্যান্স চালুর ফলে সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে আন্তঃসংযােগ বৃদ্ধি পেয়েছে, কর্মীদের দক্ষতাও বেড়েছে। ফলে দ্রুত সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশে ই-গভর্ন্যান্স চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর হয়েছে। এখনাে অনেক ক্ষেত্রে ই-গভর্ন্যান্স চালু হওয়ার বাকি রয়েছে। সকল ক্ষেত্রে ই-গভর্ন্যান্স চালু হলে সুশাসনের পথে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।

ই-সার্ভিস ও বাংলাদেশ সরকারি এবং বেসরকারি অনেক সেবামূলক সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে অথবা সময়ে সময়ে দেশের জনগণকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। এই সেবা হতে পারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত কিংবা কোনাে জমির দলিলের নকল সরবরাহ করা। ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হওয়ার পূর্বে এই সকল সেবার ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাকে অবশ্যই সেবাদাতার সঙ্গে সরাসরি যােগাযােগ করতে হতাে। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবাগ্রহীতা নিজ বাড়িতে বসেই মােবাইল ফোনে বা ইন্টারনেটে একই সেবা গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণ হিসাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য কোনাে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট সংগ্রহের কথা বিবেচনা করা যায়। কিছুদিন পূর্বেও এই টিকেট সংগ্রহের জন্য যাত্রী নিজে অথবা তার কোনাে লােকের ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে, লাইনে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হতাে। এই পদ্ধতি এখনও বহাল আছে। তবে, এর পাশাপাশি এখন যে কেউ অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করতে পারে। অনলাইনেই টিকেটের মূল্য পরিশােধ করা যায়। এভাবে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সেবা প্রদানের ব্যাপারটি ই-সার্ভিস বা ই-সেবা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ই-সেবার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে-এটি স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে এবং হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরসমূহের উদ্যোগে ইতােমধ্যেই অনেক ই-সেবা চালু হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে পাঠ্যপুস্তকের ডিজিটাল সংস্করণ, ই-পূর্জি, ই-পর্চা, ই-টিকেট, টেলিমেডিসিন, অনলাইন আয়কর হিসাব করার ক্যালকুলেটর ইত্যাদি। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযােগ্য ই-সেবা কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলাে।

ক. ই-পূর্জি : দেশের প্রথম দিককার ই-সেবাসমূহের একটি। দেশের ১৫টি চিনিকলের সকল আখচাষি এখন
এসএমএসের মাধ্যমে পূর্জি তথ্য পাচ্ছে। পূর্জি হচ্ছে চিনিকলসমূহে কখন আখ সরবরাহ করতে হবে সে জন্য আওতাধীন আখচাষিদের দেওয়া একটি অনুমতিপত্র। এসএমএসের মাধ্যমে আখচাষিরা তাৎক্ষণিকভাবে পূর্জির তথ্য পাচ্ছে বলে এখন তাদের হয়রানি ও বিড়ম্বনার অবসান হয়েছে। পাশাপাশি
সময়মতাে আখের সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় চিনিকলের উৎপাদনও বেড়েছে।

খ. ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম (ই-এমটিএস) : বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার
সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে নিরাপদে, দ্রুত ও কম খরচে টাকা পাঠানাে যায়। ১ মিনিটের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠাননা যায়। দেশের প্রায় সকল ডাকঘরে এই সেবা পাওয়া যায়। এ
তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি ও আমাদের বাংলাদেশ


গ. ই-পৰ্চা সেবা : বর্তমানে দেশের সকল জমির রেকর্ডের অনুলিপি অনলাইনে সংগ্রহ করা যায়। এটিকে বলা
হয় ই-পর্চা। পূর্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীগণ বড় বড় রেকর্ড বই থেকে তথ্যসমূহ পূর্ব নির্ধারিত ছকে পূরণ করে আবেদনকারীকে সরবরাহ করতেন। এজন্য আবেদনকারীকে যেমন সরাসরি উপস্থিত হতে হতাে তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীরাও গতানুগতিক পদ্ধতিতে পর্চা তৈরি করতেন। বর্তমানে এটি ই-সেবার আওতায় আসাতে আবেদনকারী দেশ-বিদেশের যেকোনাে স্থান থেকেই নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে পর্চা সংগ্রহ করতে পারেন। ই-স্বাস্থ্যসেবা : বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিত্সকরা এখন মােবাইল ফোনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এজন্য দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে একটি করে মােবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে। দেশের যেকোনাে নাগরিক এভাবে যেকোনাে চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পারেন। এছাড়া দেশের কয়েকটি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে রােগী হাসপাতালে না এসেও
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা ও পরামর্শ পাচ্ছেন । ঙ. রেলওয়ের ই-টিকেটিং ও মােবাইল টিকেটিং : বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট
এখন মােবাইল ফোনেও ক্রয় করা যায়। আবার অনলাইনেও টিকেট সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে, নিজের সুবিধামতাে সময়ে রেলস্টেশনে না গিয়েও নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকেট সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে। মােবাইল ফোন বা অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করা হলে ট্রেন ছাড়ার অল্প সময় পূর্বে যাত্রীকে স্টেশনে যেতে হয় এবং মােবাইল ফোন বা অনলাইনে প্রাপ্ত গােপন নম্বর প্রদর্শন করে সেখানে নির্ধারিত কাউন্টার থেকে যাত্রার টিকেট সংগ্রহ করে নিতে হয়।


ই-কমার্স ও বাংলাদেশ

একটি দেশের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের কোনাে বিকল্প নেই। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশ, ইন্টারনেটের উদ্ভব ও বিকাশ এবং কাগজের মুদ্রার বাইরেও ইলেকট্রনিক বিনিময় প্রথা চালু হওয়ার ফলে বাণিজ্যেরও একটি বিশেষ পরিবর্তন হয়েছে। এখন ইলেকট্রনিক মাধ্যমেও বাণিজ্য করা যায়, যার প্রচলিত নাম ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য। যেকোনাে পণ্য বা সেবা বাণিজ্যের কয়েকটি শর্ত থাকে। প্রথমত বিক্রেতার কাছে পণ্য থাকা। দ্বিতীয়ত ক্রেতা কর্তৃক তার বিনিময় মূল্য পরিশােধ করা। এর প্রধান পদ্ধতি হলাে বিক্রেতার সঙ্গে ক্রেতার সরাসরি যােগাযােগ। কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে একজন বিক্রেতা তার পণ্যের ছবি, ভিডিও দিয়ে ইন্টারনেটেই তার ‘দোকানটি খুলে বসতে পারেন। এজন্য তার প্রতিষ্ঠানের একটি ওয়েবসাইট চালু করতে হয়। ক্রেতা অনলাইনে তার পছন্দের পণ্যটি পছন্দ করেন এবং মূল্য পরিশােধ করেন। দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এই মূল্য পরিশােধের সুযােগ রয়েছে। এছাড়া মােবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও মূল্য পরিশােধ করা যায়। তৃতীয়ত মূল্য প্রাপ্তির পর বিক্রেতা তার পণ্যটি ক্রেতার ঠিকানায় নিজে অথবা পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের (কুরিয়ার সার্ভিস) মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। মােবাইল বা কার্ড ছাড়াও ই-কমার্সে আরাে একটি বিল পরিশােধ পদ্ধতি রয়েছে। এটিকে বলা হয় প্রাপ্তির পর পরিশােধ বা ক্যাশ অন ডেলিভারি (COD)। এই পদ্ধতিতে ক্রেতা বিক্রেতার ওয়েবসাইটে বসে পছন্দের পণ্যটির অর্ডার দেন। বিক্রেতা তখন পণ্যটি ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেন। ক্রেতা পণ্য পেয়ে বিল পরিশােধ করেন। ফর্মা-২, তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি, ৯ম-১০ম শ্রেণি
তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি


২০১১-১২ সাল থেকে বাংলাদেশেও আস্তে আস্তে ই-কমার্সের প্রসার হচ্ছে। বর্তমানে বই থেকে শুরু করে জামা, কাপড়, খাবার, শৌখিনসামগ্রী ইত্যাদি ই-কমার্সের মাধ্যমে বেচাকেনা হচ্ছে। প্রচলিত বাণিজ্যের মতাে ই-কমার্সেও দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান লক্ষ করা যায়। এক ধরনের প্রতিষ্ঠান কেবল নিজেদের পণ্য বিক্রয় করে থাকে। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয় করে। তােমরা ইতােমধ্যে ওয়েবসাইট, টিভি বা পত্র-পত্রিকায় এধরনের অনেক ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন দেখে ফেলেছ।।
বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে আইসিটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতাে বাংলাদেশেও এখন কর্মক্ষেত্রে আইসিটির বহুমুখী প্রভাব ও ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। এই প্রভাব ও পরিসর ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। কর্মক্ষেত্রে আইসিটির দুই ধরনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। প্রথমত প্রচলিত কর্মক্ষেত্রগুলােতে আইসিটির প্রয়ােগের ফলে কর্মদক্ষতার বৃদ্ধি এবং বাজার সম্প্রসারণ, অন্যদিকে আইসিটি নিজেই নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। প্রচলিত কর্মক্ষেত্র এবং পুরাতন ব্যবসা-বাণিজ্যে আইসিটি ব্যবহারের ফলে কর্মীদের দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা বেড়েছে। অন্যদিকে এর ফলে সেবার মানও উন্নত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ চাকরির ক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহারের সাধারণ দক্ষতা একটি প্রাথমিক যােগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। ব্যাংক, বিমা থেকে শুরু করে বহুজাতিক কোম্পানি, সরকারি দপ্তরে কাজ করার জন্য ওয়ার্ড প্রসেসর থেকে উপস্থাপনা সফটওয়্যার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং থেকে ই-মেইল, নানান ধরনের বিশ্লেষণী সফটওয়্যার ইত্যাদিতে দক্ষ হতে হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বিশেষায়িত সফটওয়্যার (যেমন:ব্যাংকিং সফটওয়্যার) ব্যবহারেও পারদর্শিতা অর্জন করতে হয়। অন্যদিকে আইসিটি নিজেই একটি বড় আকারের কর্মবাজার সৃষ্টি করেছে। হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি এখন নতুন দক্ষ কর্মীদের জন্য একটি বিরাট কর্মক্ষেত্র। কেবল দেশে নয়, আইসিটিতে দক্ষ কর্মীরা দেশের বাইরে কোনাে প্রতিষ্ঠানে অথবা স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারে। এই কাজের একটি বড় অংশ দেশে বসেই সম্পন্ন করা যায়। আউটসাের্সিং করে এখন অনেকেই বাংলাদেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
সামাজিক যােগাযোগ ও আইসিটি মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে চলাফেরা ও বিকাশের জন্য মানুষে মানুষে যােগাযােগের প্রয়ােজন। তবে এখন আইসিটিতে সামাজিক যােগাযোেগ বলতে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মানুষে মানুষে মিথস্ক্রিয়াকেই বােঝায়। এর অর্থ হলাে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ যােগাযােগ ও ভাব প্রকাশের জন্য যা কিছু সৃষ্টি, বিনিময় কিংবা আদান-প্রদান করে তাই সামাজিক যােগাযােগ। তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির বিকাশের ফলে বর্তমানে এই যােগাযােগ হয়ে পড়েছে সহজ, সাশ্রয়ী এবং অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ। ইন্টারনেটের ব্যবহার, ই মেইল, মােবাইল ফোন ও মেসেজিং সিস্টেম, ব্লগিং এবং সামাজিক যােগাযােগ প্ল্যাটফর্মসমূহ ব্যবহার করে বর্তমানে আইসিটিভিত্তিক সামাজিক যােগাযােগ অনেকাংশে সহজ। ইন্টারনেটে গড়ে উঠেছে অনেক প্ল্যাটফর্ম, যা সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুইটি মাধ্যম হলাে-ফেসবুক ও টুইটার।

Leave a Comment

Scroll to Top