সমাজ বাংলা ভাষা ও বাঙালির ঐতিহ্য হাজার বছরের ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সকল সশস্র ও রাজনৈতিক সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিল যে বাঙালি জাতি । সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি কলকাতা থেকেই এখন হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলা ভাষা । ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সভাপতি অমিত শাহ দেশের প্রধান ভাষা হিসাবে হিন্দিকে তুলে ধরার কথা বলেছেন। আর রাস্তায় , আড্ডায় ও সংলাপে চলছে হিন্দি বলে আধুনিক হবার প্রচেস্টা ।
বাংলার হিন্দি সংস্কৃতির ধারক কিছু তরুন
অনেক হিন্দিবাদি বাঙালি তরুনেরা রাজ্যের নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে ” বাংলা ” করার হাসি তামাসা ইংরেজি , হিন্দি ভাষায় করছেন
এখন কলকাতার বাঙালি আধুনিক সমাজ বা তরুণেরা হিন্দি, ইংলিশ ও বাংলা মিশিয়ে এক জগাখিচুড়ি ভাষার জন্ম দিয়েছে । হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসনের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা ভাষা বিলুপ্তির সূচনার লাগাম টেনে না ধরলে পলাশির প্রান্তরে কিছুদিন পর উঠবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের ঝাণ্ডা । গত ৬০ বছরে প্রায় ২৫০ ভারতীয় ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে । আজ থেকে ৬০ বৎসর মানে ২০৮০ এর মধ্যে বাংলা ভাষাও এই তালিকায় আসার প্রহর গুনছে । বিবিসির সাংবাদিক মালবী গুপ্ত তাই বলেন ”
” পশ্চিমবঙ্গের জন্ম বাংলাদেশের মত কোন রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে হয় নি। রাজ্যবাসীদের কাছে বাংলাভাষা অনেকটাই যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। তাই তাকে নিয়ে কোন বিশেষ আবেগ নেই আমাদের। বরং যা রয়েছে তা হল কিছুটা অবজ্ঞা মিশ্রিত অবহেলা “
এক বাঙ্গালী তরুন কে হিন্দি বলতে হেনস্থা করছে
কলঙ্কিত বাঙালি পরিবারে
অনেক শিক্ষিত নামে কলঙ্কিত বাঙালি পরিবারে বাংলাকে বাদ দিয়ে ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা হয় । নব্য হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন কে আজ অনেক পশ্চিমবঙ্গের তরুণ সমাজ মনের অজান্তেই ধারণ করে । পশ্চিমবঙ্গের বহু বাঙালিই আড্ডায়, বাংলা নয়, ইংরেজি বলতেই বেশি পছন্দ করেন ।
বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি পর্যায়ে কাজের ভাষা, হোর্ডিং, সব স্কুলে বাংলা পড়ানো বাধ্যতামূলক ছিল । কিন্তু সে উদ্যোগ তত কার্যকর হয়নি বলেই ২০১৭তে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রীকে সব স্কুলে বাধ্যতামূলক বাংলা পড়ানোর নির্দেশ দিতে হয়।
নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব থাকলেও পশ্চিমবঙ্গবাসীকে হিন্দি নিয়ে প্রতিবাদে সরব হতে খুব একটা দেখা যায়নি। বরং অনেক সময়েই দুই বাঙালিকে নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলতে শোনাও যায়।
কলকাতার হিন্দি প্রেম
কলকাতার এমন অনেক রাস্তা রয়েছে, যেখান দিয়ে হাঁটলে বোঝা যাবে না, এটা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী৷ দোকানের বোর্ডে চোখ রাখলে এটা সবচেয়ে ভালো বোঝা যায়৷ কান পাতলে মানুষের আলাপচারিতায় হিন্দির প্রাধান্য নজর এড়াবে না৷ অনেক সময়ই মনে হতে পারে, হিন্দিই এখানকার প্রধান ভাষা৷
কিন্তু সব তরুনেরা কি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ মেনে নিচ্ছে ?
পশ্চিমবঙ্গের ট্রেনে-বাসে নজরকাড়া পোস্টার চোখে পড়ছে৷ একাধিক পোস্টারের বক্তব্য, হিন্দি রাষ্ট্রভাষা নয়৷ বাংলায় থাকলে বাংলা জানতে হবে ।
হিন্দি সংস্কৃতির অগ্রাসনে আজ পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালিরা ভুলতে বসেছেন বাংলা । হিন্দি জাতীয়তাবাদের কাছে ধরাশয়ি আজ বাঙালি জাতীয়তাবাদ । যে কলকাতার রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারায় স্বাধিন হয়েছে পূর্ব বাংলা , পেয়েছি আমরা ” স্বাধিন বাংলাদেশ ” তারা আজ ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে তাদের প্রানের ভাষা ।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের কেন্দ্রিয় ভুমিকায় থাকা শহর কলকাতা । নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু , হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিস্বকবি রবিন্দ্রনাথের পদধূলিতে উদ্ভাসিত যে শহর – সেই শহর ভুলে গেছে বাংলা , সেই শহর ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে তার প্রান ও ঐতিহ্য – এটা মেনে নেওয়া কঠিন । একদিন হয়ত এই তারুন্য জেগে উঠবে ? ভেঙ্গে ফেলবে সকল চাপিয়ে দেওয়া ভারতীয় জাতীয়তাবাদের দাসত্বের সেকল । ১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে যে বাংলার স্বাধিনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল – সেই সূর্য হয়ত একদিন উদিত হবে । তার আলোয় হয়ত উদ্ভাসিত হবে এই বাংলা ।
— আজিজ তারেক । সম্পাদক বিডিনিউজ নেট ডট কম