বিশ্বজুড়ে চলামান মহামারি করোনা ভাইরাস কে রুখতে, টিকা আবিষ্কার এর জন্য পৃথীবির শক্তিধর দেশগুলোর গবেষকরা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। তন্মধ্যে বিশ্বে সবার আগে করোনার টিকা বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। গতকাল দেশটি দাবি করেছে, আগামী ১০ আগস্টের আগেই তাদের টিকা চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। যদিও এই টিকা কতটা কার্যকর, কিংবা কতটা নিরাপদ তার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেননি রুশ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
এদিকে করোনার টিকা নিয়ে আরেকটি সুখবর দিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান মডার্না। গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের টিকা বানরের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম। আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এই টিকা প্রয়োগের পর করোনাভাইরাস নাকের মধ্যেও বংশবিস্তার করতে পারে না।
রাশিয়ার টিকাটি বানিয়েছে গ্যামেলেই ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এতে অর্থায়ন করেছে রাশিয়ার সভেরিন ওয়েলথ ফান্ড। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ গতকাল সিএনএনকে জানান, ১০ আগস্ট কিংবা তার আগেই তাঁদের টিকা বাজারে ছাড়া হবে। তবে সবার আগে এটি পাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তিনি বলেন, ‘১৯৫৭ সালে রাশিয়া যখন বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়, তখন আমেরিকানরা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। এবার টিকা নিয়েও আমরা একই ধরনের চমক দেখাতে চাই।’
বানরের শরীরে সফল মডার্নার টিকা : মডার্নার টিকা পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের দেহেও প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলও মিলেছে আশাব্যঞ্জক। এখন বড় পরিসরে মানবদেহে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে এটি। এর মধ্যে সম্প্রতি বানরের শরীরে এই টিকা প্রয়োগ করে দেখেন গবেষকরা। আর গবেষণার বিস্তারিত ছাপা হয়েছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন সাময়িকীতে।
মোট ২৪টি বানরের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। ২৪টি বানরকে ভাগ করা হয় তিনটি দলে। এর মধ্যে এক দলের আটটি বানরের শরীরে ১০ মাইক্রোগ্রামের টিকা দেওয়া হয়। আরেক দলে দেওয়া হয় ১০০ মাইক্রোগ্রামের টিকা। বাকি আটটি বানরের শরীরে কোনো টিকা দেওয়া ছিল না। কয়েক দিন পর দেখা গেছে, টিকা দেওয়া সব বানরের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এখানে আরেকটি বিষয় খুবই লক্ষণীয় ছিল। সেটা হলো, করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির শরীরে যে মাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, মডার্নার টিকা তার চেয়ে বেশি মাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। মডার্নার টিকা নিয়ে একটা দুশ্চিন্তাও ছিল। সেটা হলো, এটি ভাইরাসকে দুর্বল করার পরিবর্তে শক্তিশালী করে তোলে কি না। টিএইচ২ নামের টি সেল তৈরি হলে এই আশঙ্কা বেড়ে যায়। তবে বানরের শরীরে এই সেল তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
(সূত্র : সিএনএন, এএফপি)